,

it-shop.Com

পর্যাপ্ত পণ্যের মজুদ: এর পরও দাম বাড়তি

Spread the love

অনলাইন ডেস্ক : চলতি সপ্তাহে পবিত্র রমজান শুরু হতে যাচ্ছে। এই রমজানকে ঘিরে পন্যমূল্য নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে ভোক্তাদের । ইতোমধ্যে কয়েকটি পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অথচ এই সব পণ্যের মজুদের চিত্র দেখলে বৃদ্ধি পাওয়ার কোন কারন খুঁজে পাওয়া যায় না। রমজান মাসে মূলত কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। আর পণ্যগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর আর ডাল। রমজানে এই সব পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে একথা যেমন সত্য। তেমনি সত্য এই সব পণ্যের দাম লাগাম টেনে ধরা অনেকটা কষ্টকর। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নিজেই ভোক্তাদের আশ্বস্ত করেছেন,এবার এই সব পণ্যের দাম বাড়বে না। তিনি আরও বলেছেন, এবার এই পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। কিন্তু এরপরও ,থেমে নেই বাড়তি দামের ।

এই সব পণ্যের দাম যেন স্থিতিশীল থাকে সে জন্য টিসিবি গত রোববার থেকে খোলাবাজারে ট্রাকে করে বেশ কয়েকটি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশব্যাপী খোলাবাজারে টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে, চিনি, ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর। সারা দেশে এসব পণ্য ১৮৪টি খোলা ট্রাক ও টিসিবির ২ হাজার ৭৮৪ জন ডিলার ও নিজস্ব ১০টি বিক্রিয় কেন্দ্রে বিক্রি হচ্ছে। এসব কার্যক্রম শুরু হলে শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহে ৫ দিন ন্যায্যমূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি দেশি চিনি বিক্রি হবে ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল মাঝারী সাইজের কেজি ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা ও খেজুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ৮৫ টাকায়। এর মধ্যে ভোক্তা প্রতি চিনি ও মসুর ডাল সর্বোচ্চ ৪ কেজি করে কিনতে পারবে। ছোলা সর্বোচ্চ ৫ কেজি, খেজুর ১ কেজি ও সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ ৫ লিটার করে কিনতে পারবেন। ভোক্তাদের মধ্যে বিক্রির জন্য প্রতি ট্রাকের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি করে। আর সব পণ্যের মধ্যে থাকবে চিনি, মসুর ডাল ও ছোলা। এছাড়া খেজুর ৩০ থেকে ৫০ কেজি ও সয়াবিন তেল ৩০০ থেকে ৪০০ লিটার করে বরাদ্দ থাকবে। এর পাশাপাশি প্রত্যেক ডিলারের জন্য চিনি ও ছোলা ৫০০ থেকে ৭০০ কেজি করে বরাদ্দ থাকছে। মসুর ডাল ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি ও সয়াবিন তেল ৩০০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত বরাদ্দ থাকছে।

রাজধানীতে ৩২টি, চট্টগ্রামে ১০টি ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা শহরগুলোতে ২টি করে ট্রাক এসব পণ্য বিক্রি করছে। এসব পণ্য ঠিকমত বিক্রি বা বিতরণ হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি কমিটি কাজ করবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব পণ্য বিক্রির জন্য বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে টিসিবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- লাল কাপড়ে টিসিবি বরাদ্দকৃত পণ্যের নির্ধারিত মূল্য সম্বলিত ব্যানার ট্রাকের সামনে টাঙিয়ে রাখতে হবে। পণ্য বিক্রি করতে হবে একটানা সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। গুদাম থেকে পণ্যের মান নিশ্চিত হয়ে সরবরাহ নিতে হবে। উপযুক্ত কারণ ছাড়া পণ্য উত্তোলণ না করলে ও নির্ধারিত স্থানের বাইরে পণ্য বিক্রি করলে সেক্ষেত্রে ট্রাকসেল বাতিলসহ জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। এমনকি, ডিলারশিপও বাতিল হতে পারে।

জানা গেছে, ঢাকায় যেসব এলাকায় ট্রাকে পণ্য বিক্রি হবে, এর মধ্যে রয়েছে- সচিবালয় গেট, প্রেস ক্লাব, কাপ্তান বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক, ছাপড়া মসজিদ, পলাশির মোড়, সাইয়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়, নিউ মার্কেট কিংবা নীলক্ষেতের মোড়, শ্যামলী, কল্যাণপুর, ঝিগাতলা মোড়, খামারবাড়ী ফার্মগেট, কলমি লতা বাজার, রজনীগন্ধ সুপার মার্কেট, কচুক্ষেত, আগারাঁও তালতলা, নির্বাচন কমিশন, আনসার ক্যাম্প মিরপুর, পাইকপাড়া মিরপুর, মাজার রোড, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, বাসাবো বাজার, বনশ্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক, মহাখালী কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, দৈনিক বাংলার মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, ফকিরাপুল বাজার, আইডিয়াল হাইস্কুল, খিলগাঁও তালতলা বাজার, রামপুরা বাজার, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর, আশকোনা হাজী ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার ও মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে।
তবে এর প্রভাব সর্ম্পকে কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সভাপতি ও সাবেক বানিজ্য সচিব বলেছেন, খোলাবাজারে যে টিসিবি ন্যায্যমূল্যে পন্য বিক্রি করেছে তাতে চাহিদা অনুপাতে অপ্রতুল। এর প্রভাব বাজারে কিছুটা হলেও পড়ে। তবে তিনি মনে করেন, এই পণ্য দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে, একদিনে সবাই সারামাসের বাজার করার প্রবনতা। সবাই যদি অল্প করে কেনেন তা হলে হয়তো বাজারে দামের প্রভাব পড়ত না।

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি রমজানে পণ্যমূল্য ও আইন শৃংখলা নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সেই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সভায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন পণ্যমূল্য যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় পথে পথে চাঁদাবাজির কারনে পণ্য মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এই চাঁদাবাজি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজেও ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন,এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।একই সঙ্গে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সব ধরনের জটিলতা দূর করবেন বলে সভায় মত প্রকাশ করেন।অবশ্য মন্ত্রী রমজান মাসে নৈতিকতার সাথে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। স্বরষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, দেশের আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ কোন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দেবেন না। এ ধরনের পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করা হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী যদি কোন সদস্য জড়িত থাকে তা হলেও তাকে ছাড় দেয়া হবে না।

এই সভায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেছেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে মে মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গড়ে ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই মূল্যবৃদ্ধির মূলে রয়েছে প্রথাগত বাজার সরবরাহ প্রক্রিয়া,অতিরিক্ত মজুদকরনের মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি,অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং। সেই সাথে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি,র্দুবিষহ যানজট ও অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ের ফলে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান বলেছেন, রমজান মাসে কিছু অসাধূ ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা আমাদের পরিলক্ষিত হয়। আর হয় মূলত পণ্যের চাহিদা ও যোগানের ঘাটতির কারণে।

এবার আসা যাক কোন পণ্যের কত চাহিদা রয়েছে এই রমজান মাসে। ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে ২লাখ ৫০হাজার টন। আর মজুদ রয়েছে ২২লাখ ৫৯হাজার টন। ছোলার চাহিদা রয়েছে ৮০ হাজার টন। আর মজুদ রয়েছে ৭লাখ ৪৬ হাজার টন। চিনির চাহিদা হচ্ছে ৩লাখ টন। আর মজুদ রয়েছে ৪লাখ ৩৫হাজার টন। পেঁয়াজের চাহিদা হচ্ছে ৪লাখ টন। আর মজুদ রয়েছে ১৭লাখ ৯১ হাজার টন। খেজুরের চাহিদা ১৮হাজার টন। আর মজুদ হচ্ছে ৬৪হাজার টন। এই যদি পরিস্থিতি হয় তা হলে রমজানে এই সব পণ্যের দাম বাড়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে-এই প্রশ্ন খোদ ভোক্তাদের । এ দিকে চিনির আর্ন্তজাতিক বাজার রয়েছে নিম্নমূখী । গত সাত মাসের একটি পরিসংখ্যানের চিত্র থেকে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। ২০১৭সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ০দশমিক ৩২ডলার। সেখানে ২০১৮সালের মার্চে এসে তা দাঁড়িয়েছে ০দশমিক ২৯ডলারে। অর্থাৎ গত কয়েকমাসে চিনির দাম ৩দশমিক ৩৩শতাংশ কমেছে।

ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।সম্প্রতি নগরভবনে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আশ্বস্তের কথা শোনান। তিনি বলেছেন, রমজান মাসে সয়াবিনতেল সহ অন্যান্য ভোজ্যতেল ,চিনি, ছোলা, ডাল ,আটা, সুজি সহ দ্রব্যগুলোর দাম বাড়বে না বলে ব্যবসায়ীদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারন করে বলেছেন, কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ রমজান শুরু না হতেই বাজারে পেঁয়াজ আর রসুনের দাম বেড়ে গেছে। পেঁয়াজের আমদানির প্রধান উৎস ভারত।

ভারতের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে কোন ধরনের অস্থিরতা নেই। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদনও হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পেঁয়াজের উৎপাদনের পরিমান ছিল ২১ লাখ ৫৩হাজার টন। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী এই সময়ে আমদানি হয়েছে ১২লাখ ৬৭ হাজার টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রয়ারি পর্যন্ত আমদানির পরিমান ছিল ৪লাখ ৫০ হাজার টন। আর রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ২ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টন। ভোজ্যতেল অপরিশোধিত আমাদানি হয়েছে কম নয়। চলতি অর্থবছরে ফেব্রয়ারি পর্যন্ত আমদানির পরিমান ছিল ১৪লাখ ৩১ হাজার টন। তবে ভোজ্যতেলের বাজার এখনও স্থিতিশীল রয়েছে।

it-shop.Com

     এই বিভাগের আরও খবর