অনলাইন ডেস্ক : সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাপ উদ্ধারের ঘটনা সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
সবশেষ রোববার বগুড়ার একটি অফিস কক্ষ থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক সাপের বাচ্চা উদ্ধার হয়। এর আগে ভোলার একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের মেঝে থেকে শত শত বিষধর সাপ বের হওয়ার ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হন।
এছাড়া নওগাঁর রাণীনগরে আড়াই শতাধিক এবং কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ছোট আলমপুরে এক বাসা থেকে অন্তত এক ডজন বিষধর গোখরা সাপের বাচ্চা উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। প্রতিবারই স্থানীয়রা এই সাপগুলোকে পিটিয়ে অথবা পুড়িয়ে মেরে ফেলে।
সাপ প্রকৃতি ও পরিবেশের একটা অংশ হলেও এই প্রাণীটিকে নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে জানা যায়- বিশ্বব্যাপি সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় ৫৪ লাখ মানুষের। ২৭ লাখ মানুষকে দংশন করে এবং মানুষ বিষে আক্রান্ত হয় । ৮১০০০-১৩৮০০০ মানুষ প্রতিবছর সাপের কামড়ে মারা যায়।
তিনি জানান, বৃষ্টির মৌসুমে সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এসময় সাপের আবাসস্থল ডুবে যাওয়ার কারণে তারা ডিম পাড়তে শুকনো ও উঁচু ভূমিতে আসে। এছাড়া বিষধর গোখরা এবং কেউটে সাপের মূল খাবার ইঁদুর হওয়ায় তারা লোকালয়ের আশেপাশে বাসা বাঁধে।
গ্রামে রান্নাঘর এবং গোলাঘরে ইঁদুরের উপদ্রব হওয়ায়, সাপের বিচারণও সেখানে বেশি থাকে।
তবে প্রতিবার এভাবে সাপ মেরে ফেলায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাপ মারা গেলে ইঁদুরকে প্রাকৃতিকভাবে দমন করা কঠিন হয়ে পড়বে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে ফসলে।
এছাড়া মেডিকেল গবেষণায় সাপের বিষ খুবই মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হওয়ায় এ প্রাণীটি সংরক্ষণের মাধ্যমে তার সুবিধা কাজে লাগানোর কথাও জানান তিনি।
এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের করণীয় কী?
এমন প্রশ্নের উত্তরে বন সংরক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল কবির জানান, কোন বাড়িতে সাপ পাওয়া গেলে সেটিকে না মেরে বন বিভাগকে খবর দিতে হবে।
এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে প্রতিটি উপজেলায় লিফলেট বিতরণ ও মসজিদে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি।
এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে তিনি আহ্বান জানান। জাহিদুল কবির বলেন, বাংলাদেশের মাত্র ৫ শতাংশ সাপ বিষধর হয়ে থাকে এবং এই বিষধর সাপগুলো সাধারণত শান্ত স্বভাবের হয়। তাই আতঙ্কিত হয়ে সাপের অযৌক্তিক হত্যা বন্ধ করতে হবে।
বন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে একটি হটলাইন নম্বর থাকলেও জনবল সংকটের কারণে দেশের প্রতিটি স্থানে এর সেবা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব বলে জানান জাহিদুল কবির।
এজন্য তিনি প্রতিটি গ্রামে সাপ ধরা ও সংরক্ষণে অন্তত একজনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা জানান।
যারা সাপগুলো উদ্ধার করে তাদের আবাসস্থলে ছেড়ে দিতে পারবে। তবে এই সংকট নিরসনে দ্রুত বন বিভাগে কর্মী নিয়োগ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সাপুড়ের পরামর্শ
সাপের দংশন থেকে বাঁচতে এই বর্ষার মৌসুমে সবাইকে সাবধানে চলার পরামর্শ দিয়েছেন সাভারের বেদেপল্লীর একজন সাপুড়ে রমজান আহমেদ। তিনি বাড়িঘর এবং আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখার পাশাপাশি রাতের বেলা অন্ধকারে চলাচল না করার পরামর্শ দেন।
সাপ সংরক্ষণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় সাপের খামার তৈরির পাশাপাশি এদের না মেরে আশেপাশের সাপুড়েদের খবর দেয়ার কথাও তিনি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালির্ফোনিয়াভিত্তিক পিএলএস নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজেস সাময়িকীতে ২০১০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে ১শ মানুষ বিষধর সাপের দংশনের শিকার হন। তবে এতে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশে সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা পদ্ধতি-সরকারি স্বাস্থ্য সেবা, প্রাইভেট চিকিৎসক, গ্রাম্য ডাক্তার, হারবাল ওষুধ ও ওঝা বা সনাতন পদ্ধতি।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ এসব অঞ্চলগুলোয় সাপের উপদ্রব বেশি। মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে বেশি কামড়ায় বলে গবেষকরা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
এই বিভাগের আরও খবর