,

it-shop.Com

৩০০ মৃত্যুদণ্ডের সাক্ষী এই মার্কিন নারী

Spread the love

অনলাইন ডেস্ক :

মিচেল লায়ন্স। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব ক্রিমিনাল জাস্টিস (টিডিসিজে)-এর একজন কর্মী। এই মার্কিন নারীর চোখের সামনেই গত ১২ বছরের অন্তত ৩০০ মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে টিডিসিজে।

জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১২ বছর ধরে মৃত্যুকে চাক্ষুষ করাই ছিল মিচেলের কাজ। ডেথ চেম্বার বা মরণ-কুঠুরিতে নিয়ে মৃত্যুশয্যায় শেষ শয়ানে হাত-পা বেল্ট দিয়ে আটকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির শরীরে দেওয়া হয় ইনজেকশন। ইনজেকশনের সেই প্রাণঘাতী তরল কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই চিরতরে নিস্তেজ করে দিয়েছে কত নারী ও পুরুষের দেহ। ফুসফুস থেকে শেষ বাতাসটুকু বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কেউ হয়তো সামান্য কাঁশি দিয়েছে কেবল। আবার কেউ হয়তো দম আটকে আসায় হাঁসফাঁস করেছে খুব। আর কেউ হয়তো হাঁপড়ের মতোন ফুঁস করে একটা শব্দ তুলেছেন শুধু। এভাবে বহু মানুষের বুক থেকে প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যেতে দেখেছেন মিচেল লায়ন্স।

২০০০ সালে প্রথমে এসব মৃত্যুকে মিচেল দেখেছেন পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে। এরপর টিডিসিজে-এর মুখপাত্র হিসেবে মৃত্যুকে সামনে থেকে পরখ করাই ছিল তাঁর কাজ। এসব মৃত্যুকে খুব নিকট থেকে দেখতে গিয়ে তাঁর নিজের ওপরও গভীর প্রভাব পড়েছিল।

১২ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করা মৃত্যুর ঘটনাগুলো নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘ডেথ রো: দি ফাইনাল মিনিটস’।

এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মিচেল জানিয়েছেন নিজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা। ১৮ বছর আগে প্রথম যে মৃত্যুর ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন লায়ন্স, সেটি এখনো ভুলতে পারেননি। তাঁর চোখের সামনেই নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল রিকি ম্যাকগিনের দেহ।

ম্যাকগিনের মতো আরো অনেকের চেহারা তাঁর স্পষ্ট মনে আছে। যদিও কী ছিল তাদের অপরাধ, কী ছিল তাদের নাম সেইসব কিছু আজ আর তাঁর মনে নেই। ১৭ বছর বয়সী নেপোলিয়ন বিজলে’র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অফিস থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় সারা পথ ধরে অঝোরে কেঁদেছিলেন লায়ন্স। তার শুধু বারবার মনে হচ্ছিল, বেঁচে থাকলে ছেলেটি হয়তো সমাজের কাজে আসতে পারতো।

এমন ভাবনা মনে আসায় তিনি আবার মানসিক টানাপড়েনেও থেকেছেন। কারণ নেপোলিয়ন বিজলে’র অপরাধও ছিল গুরুতর। তাই, তিনি এটিও ভেবেছেন যে, বিজলের হাতে যিনি খুন হয়েছিলেন লায়ন্স নিজে যদি সেই পরিবারের কেউ হতো তাহলে তার মৃত্যুদণ্ডই হয়তো চাইতেন তিনি।

এখন ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা হলেও একসময় তা করা হতো ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে। ১৯২৪ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত এভাবেই ৩৬১ জনের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। ১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই আদেশে মৃত্যুদণ্ডকে ‘নৃশংস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু এই আদেশের কিছু দিনের মধ্যেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে। একপর্যায়ে নিষিদ্ধ হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই টেক্সাসে আবারো বহাল হয় মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান।

উল্লেখ্য, টেক্সাসে অন্য যে কোনো অঙ্গরাজ্যের চেয়ে বেশি সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কেবল ২০০০ সালেই সেখানে এই শাস্তি পেয়েছিল ৪০ জন। অন্যদিকে ২০১৩ সালের এক জরিপেই উঠে এসেছিল যে, টেক্সাসের অন্তত ৭৪ শতাংশ মানুষ মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করছে।

it-shop.Com

     এই বিভাগের আরও খবর