অনলাইন ডেস্ক : খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার জয়কে সরকারের উন্নয়নের প্রতি জনগণের আস্থার প্রতিফলন হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনগুলোয়ও এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রচারের পরিকল্পনা আছে।
থানীয় সরকার পর্যায়ের সিটি কর্পোরেশন ইলেকশন এবং জাতীয় নির্বাচনে দেশের উন্নয়ন তথা জনতার পাশে দাঁড়ানোর মতো ইস্যু কাজে লাগিয়ে জয় নিশ্চিত করতে চান আওয়ামী লীগের নেতারা। উন্নয়ন প্রচারে ১৫টি টিম মাঠে কাজ করছে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত দলটি জোরালোভাবে সাংগঠনিক সফর করবে। দলের হাইকমান্ড মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে উন্নয়নই হবে জয়ের মূলমন্ত্র। এছাড়া জয়ের জন্য দলের ঐক্যও বড় ভূমিকা রাখে। কাজেই নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, দেশের মানুষকে বাদ দিয়ে বিদেশিদের কাছে বিএনপির হাজারও নালিশে মানুষ আর গা করছে না। বিষয়টি জনগণ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। তারা মনে করছেন, ভোট দেবে দেশের মানুষ। অভিযোগ যা-ই থাকুক, তা দেশের মানুষের কাছেই করতে হবে। কিন্তু বিএনপি দৌড়ে গিয়ে বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করছে। এটা একদিকে তারা (বিএনপি) দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে, অন্যদিকে দেশবাসীকে হেয় করা হচ্ছে। এসব কারণে দুর্নীতির দায়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজাও মানুষ সঠিক উপলব্ধিতে গ্রহণ করেছেন। ফলে খুলনায় বিএনপির এত অপপ্রচারের পরও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। বিএনপি সহানুভূতি আদায়ের মাধ্যমে ভোটে জেতার চেষ্টা করেছে। অপরদিকে শাসক দল উন্নয়নের কথা বলে প্রচার চালিয়েছে। মানুষ সহানুভূতি দেখানোর পরিবর্তে উন্নয়নকে গ্রহণ করেছে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন। তাদের মতে, মানুষ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন, সরকার শুধু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না, সত্যিকার অর্থে দেশের উন্নয়নও করছে। এসব কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে শাসক দল সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করতে চাচ্ছে।
১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ৬৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এ ভোটে আওয়ামী লীগ তাদের অর্জনগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে। বিএনপি প্রচার করেছে তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস বিষয়টি। তারেক রহমানসহ দলটির নেতাকর্মীদের ওপর মামলা, নির্যাতনের চিত্র তুলে এনে খুলনাবাসীর কাছে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেছে বিএনপি। কিন্তু ভোটের মাঠে ভোটাররা উন্নয়নকেই প্রাধন্য দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, দেশের মানুষ এখন উন্নয়নে বিশ্বাস করে। খুলনার মানুষ উন্নয়নের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছেন। দেশের মানুষ আর কারও নালিশ কিংবা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয় না। খুলনা নির্বাচনে সেটি প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষও চায় উন্নয়নের সঙ্গে থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে। আমরা বরাবরের মতো উন্নয়ন সাফল্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরব। আশা করি, সরকারের এ উন্নয়ন সফলতায় আগামী দিনেও দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে ভোটবিপ্লব ঘটাতে গ্রামাঞ্চলের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ লক্ষ্যে গ্রামকে আগামী বাজেটেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার। এরই মধ্যে ঘোষণা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। অনুন্নত এলাকার মেঠো পথটিও এখন পিচঢালাই হচ্ছে। বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় প্রায় পুরো দেশ। ইন্টারনেট এখন প্রায় ঘরে ঘরে। ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে বসে সারা পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। অনন্য উচ্চতায় আজ বাংলাদেশ। দেশবাসী এখন ভোট দেয়ার সময় এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়। দেশের মানুষ এখন তুলনামূলক বিচার করে। আর এ বিচারেই খুলনায় জিতেছে আওয়ামী লীগ।
সরকারে উন্নয়ন এখন জনগণের দোরগোড়ায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, সরকার টানা দুই মেয়াদের উন্নয়নের সুফল এখন দেশের মানুষ উপভোগ করছে। আগামী নির্বাচনে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে। আমরাও টিম করে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের তৃণমূলে গিয়ে এ নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের সর্বক্ষেত্রে আমরা ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, আগামী নির্বাচনে এ উন্নয়নই আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করেন, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল তারা। আগামী নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনগুলোয় হার বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও ছিল অনেকের। খুলনা সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি এসিড টেস্টও ছিল। এখানে দলের প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও সরকারের উন্নয়ন প্রচার ব্যাপক কাজে দিয়েছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। এ জয় আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
খুলনা সিটি নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে এখন আওয়ামী লীগ। দলটির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতার মতে, সরকারের উন্নয়ন-অর্জনের কারণে জয় এসেছে। তারা বলছেন, এ সরকার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ জয় করেছে, সমুদ্র ও সীমান্ত বিজয় দেশবাসীর কাছে আওয়ামী লীগকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। শুধু কি তাই? পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সুবিধা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অনকে দূর এগিয়ে গেছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন মানুষকে সরকারে প্রতি আরও আস্থাশীল করেছে বলেও মনে করছেন তারা। খুলনা সিটি নির্বাচনে বিশাল জয়ে এ ভাবনার গতি আরও বাড়িয়েছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। ভুলভাল বুঝিয়ে ভোট নেয়ার দিন শেষ। তারা উন্নয়ন দেখে ভোট দিচ্ছে। আগামী দিনেও তারা উন্নয়ন দেখেই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনবে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, উন্নয়নের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধতাও নির্বাচনের জয়কে অনেকটাই সহজ করে। খুলনা সিটিতে দলীয় নেতাদের মধ্যে ঐক্য ছিল। প্রচারও হয়েছে ব্যাপক। সাধারণ মানুষ দলের প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাদের সমর্থনকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছেন। ভোটের মাঠে এটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। খুলনা সেটিতে এর প্রমাণ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। কুমিল্লা ও রংপুরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন ছিল। আগামী দিনেও এ বিষয়টিতে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে দলটি।
এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কূটনীতিকদের কাছে অনিয়ম ও সহিংসতা নিয়ে সচিত্র অভিযোগ করেছে বিএনপি। এক অভিযোগে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। একই সঙ্গে তিনি অনিয়ম ও সহিংসতা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে বিষয়টিতে একেবারেই গা করছে না আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, এটি বিএনপির পুরনো অভ্যাস। কিছু হলেই নালিশ করে। জিতলে তারা বলে ভালো। হারলেই খারাপ। এ চরিত্র দেশের মানুষও বুঝে গেছে।
খুলনা সিটি নির্বাচনের জয়কে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন ও কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তিনি বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ১০ বছরে আওয়ামী লীগ অনেক উন্নয়ন করেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ এখন উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও দক্ষ নেতৃত্ব, দেশের উন্নয়ন ও সুশাসনে মানুষ খুলনায় ভোট দিয়েছে। আগামী দিনেও তারা এ উন্নয়নের প্রতি আস্থা রেখে ভোট দেবে।
Source : Jugantor