,

it-shop.Com

চেক ডিজঅনার অপরাধ প্রমাণে যা জানা দরকার

Spread the love

অনলাইন ডেস্ক : দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে দায় অথবা ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে চেকের ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময়ে চেকে উলিস্নখিত অঙ্কের টাকা চেক প্রদানকারীর একাউন্টে না থাকলে সংশিস্নষ্ট ব্যাংকের পক্ষে চেক গ্রহণকারীকে টাকা দেয়া সম্ভব হয় না। অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে ব্যাংক কর্তৃক চেক প্রত্যাখ্যান করা হয়। যা চেক ডিজঅনার নামে পরিচিত। পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে চেক ডিজঅনার হলে চেক প্রদানকারী একাউন্টধারীর বিরম্নদ্ধে মামলা করা যাবে। কারণ, অপর্যাপ্ততার কারণে ব্যাংকের চেক প্রত্যাখ্যাত আইনে শাস্ত্মিযোগ্য অপরাধ। তহবিল অপর্যাপ্ততায় কোনো চেক প্রত্যাখ্যাত বা ডিজঅনার হলে সেইসব অপরাধের প্রতিকারের সুরক্ষা বিধান করা হয়েছে হস্ত্মান্ত্মরযোগ্য দলিল আইনের (এনআই অ্যাক্ট) ১৩৮, ১৪০ ও ১৪১ ধারায়।
দেশের আদালতগুলোতে প্রচুর এনআই অ্যাক্টের অধীনে মামলা চলমান আছে। এই আইনে প্রতিদিন নতুন মামলা দায়েরও হচ্ছে। এসব দেখে সহজে অনুমান করা যায় দৈনন্দিন আর্থিক কর্মকা-ে চেকের অপব্যবহার কী পরিমাণ হচ্ছে। চেক ডিজঅনারের মামলা অন্যান্য সাধারণ আইনের চেয়ে ব্যতিক্রম। যার কারণে এই আইন সম্পর্কে জানার পাশাপাশি মামলায় অপরাধ প্রমাণ করতে বেশ কিছু সতর্কতা শুরম্ন থেকে শেষ পর্যন্ত্ম নিতে হয়। নির্দিষ্ট সময় এবং নিয়ম মেনে মামলা করে রায় নিতে হয়। এই আইন সম্পর্কে অবহেলা বা অজ্ঞতা কিংবা অজানার কারণে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন ও ক্ষতিগ্রস্ত্ম হন। সমস্যাগুলোর কারণে মামলা খারিজ হয় কিংবা বিচারে অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হন। যার ফলে বাদীর আর ওই টাকা পাওয়া হয় না। মামলা-মোকদ্দমা করতে তার অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। সামাজিকভাবে তিনি হেয় প্রতিপন্ন হন। মূলত এসব বিবেচনায় এই লেখায় প্রয়োজনীয় কিছু আইনগত বিষয়ে আলোচনা করা হবে, যা চেক ডিজঅনারসংক্রান্ত্ম মামলায় অপরাধ প্রমাণ করতে সহায়ক হতে পারে।
প্রথম কথা হচ্ছে, এই আইনে মামলা দায়ের করতে হলে কোনো দায় অথবা ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে চেকের ব্যবহারটা হবে। উক্ত স্বাক্ষরিত চেকটি প্রদানকারী কর্তৃক ইসু্যর তারিখ থেকে ৬ মাস সময়ের মধ্যে নগদায়নের জন্য সংশিস্নষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে চেক গ্রহণকারীকে। সংশিস্নষ্ট ব্যাংক কর্তৃক চেকটি অপরিশোধিত অবস্থায় ফেরত আসার অর্থাৎ ডিজঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে চেক ডিজঅনার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চেকে উলিস্নখিত অঙ্কের টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হবে। চেক ইসু্যকারীকে তিনভাবে উপরিউক্ত দাবি জানানো যায়- চেক প্রদানকারী অর্থাৎ নোটিশগ্রহীতার হাতে সরাসরি নোটিশ প্রদান করে অথবা প্রাপ্তিস্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে চেক প্রদানকারীর জ্ঞাত ঠিকানায় অর্থাৎ সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা কিংবা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর নোটিশ প্রেরণ করে অথবা বহুল প্রচারিত কোনো জাতীয় বাংলা দৈনিকে নোটিশটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে। আইনে প্রতিটা ক্ষেত্রেই ‘অথবা’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোনো একটা পদ্ধতি অনুসরণ করলে হবে। কোনোভাবেই নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না। চেক প্রদানকারী নোটিশপ্রাপ্তির পর চেকের প্রাপক বরাবরে চেকে উলিস্নখিত অঙ্কের টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে। মামলা করার ক্ষেত্রে বর্ণিত সময় অত্যন্ত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেয়া হয়েছে কেবল তিনিই মামলা করতে পারেন। ব্যাংকের এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত সেই আদালতে করতে হবে। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেয়া হয়েছে তিনিই মামলা করতে পারেন। অভিযোগ নালিশি মামলা বা সিআর মামলা হিসেবে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করতে হবে। মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, ডিজঅনারের রসিদ, আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি, পোস্টাল রসিদ, প্রাপ্তি রসিদ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এসবের ফটোকপি ফিরিস্ত্মি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
মামলার আরজিতে চেক প্রদানকারীর নাম, প্রদানের তারিখ, ডিজঅনার হওয়ার তারিখ, ব্যাংক ও শাখার নাম, হিসাব নম্বর, চেক নম্বর ও টাকার পরিমাণ এবং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চেক দেয়া হয়ে থাকলে ইসু্যকারী কর্মকর্তার নাম, পদবি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উলেস্নখ করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলে এই আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উলেস্নখ করতে হবে। মামলা দায়ের করার পর সমন ও ওয়ারেন্ট দ্রম্নত জারির জন্য বিশেষ তদবির করতে হবে যাতে আসামি হাজির হয়। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করলেও অপরাধের মূল বিচার হয় দায়রা আদালতে। দায়রা আদালত ইচ্ছা করলে যুগ্ম দায়রা আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠাতে পারেন। বিচার শেষে অপরাধের শাস্ত্মি হিসেবে আইনানুসারে এক বছরের কারাদ- অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুণ পর্যন্ত্ম পরিমাণ অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ আছে। তবে আপিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উলিস্নখিত টাকার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ টাকা যে আদালত দ- প্রদান করেছেন সেই আদালতে জমা দিতে হবে একাউন্টধারীকে।
চেকে উলিস্নখিত টাকার যতটুকু জরিমানা হিসেবে আদায় হবে তা চেকের বাহক বা ধারককে প্রদান করা হয়। অনেক সময়ে দেখা যায় আসামিরা সাজা খেটেই বেরিয়ে যান। টাকা আর পরিশোধ করেন না। বিজ্ঞ বিচারিক আদালত চেকের মামলায় জরিমানার টাকা আদায়ে জেলা কালেক্টর বা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারি কৌঁসুলি মারফত দেওয়ানি আদালতে জারি মামলা দায়ের করতে হয়। যদি কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হস্ত্মান্ত্মরযোগ্য দলিল আইনের অধীনে মামলা করা না যায় তাহলে দ-বিধি ৪০৬ ও ৪২০ ধারা অনুসারে ফৌজদারি মামলা করা যায়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। দোষী সাব্যস্ত্ম হলে সাত বছর পর্যন্ত্ম কারাদ- ও জরিমানা হতে পারে। মোটামুটি উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে চেকসংক্রান্ত্ম অপরাধের বিরম্নদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

it-shop.Com

     এই বিভাগের আরও খবর