দর্পণ ডেস্ক : বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শেষ। এরইমধ্যে রায় হয়েছে। দ্রুত এ রায়ের বাস্তবায়ন হবে। পর্যায়ক্রমে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আজ (সোমবার) সকালে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা চলে গেছেন, তারা তো আর কোনোদিনও ফিরবেন না। কিন্তু স্বজনরা তো বিচার দেখে যেতে পারবেন। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি হবে। এরইমধ্যে বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসময় শহীদদের স্মরণে বনানীর সামরিক কবরস্থানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, বিজিবির মহাপরিচালকসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর এ বাহিনীর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ দশ বছরে এ বাহিনীর মানসিকতা চেঞ্জ করা হয়েছে। এটি এখন আগের চেয়ে অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, বিডিআর আইন পরিবর্তন করে বিজিবি আইন ২০১০ প্রণীত হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী এখন বিজিবি পরিচালিত হচ্ছে। বিজিবি এখন সশৃঙ্খল বাহিনী। বিজিবির উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বর্ডার সুরক্ষায় সদস্যরা যথেষ্টে আন্তরিক এবং সোচ্চার রয়েছে’।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদস্যরা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পিলখানা এলাকায় অবস্থিত বিডিআর সদরদপ্তরে বিডিআর থেকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কর্তৃত্বের অবসান, রেশন ও বেতনবৈষম্য দূর করাসহ বেশ কিছু দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহে উর্ধ্বতন ৫৭ জন কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়, যা সারা দেশকে আতঙ্কিত করে তোলে। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পৃথক মামলা হয়। একটি হত্যা, অন্যটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। হত্যা মামলায় আসামি ছিলেন ৮৫০ জন। এই মামলায় বিচারিক আদালতে ৮৫০ আসামির মধ্যে ৮৪৬ জন বিচারের মুখোমুখি হন। বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়, আর খালাস পান ২৭৮ জন।

রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডিত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ খালাস পাওয়া ৬৯ জনের ক্ষেত্রে পৃথক আপিল করে। এ হিসাবে উচ্চ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হন ৬৩৭ জন, যাঁদের মধ্যে ২৮ জন আপিল করেননি ও ৬ জন বিচারিক আদালতের রায়ের পর মারা যান। এ হিসাবে সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০৩। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ শুরু হয়। ৩৭০ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদুল আলম ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ১৮৫ আসামিকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, যাঁদের মধ্যে ৩১ জন বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পেয়েছিলেন। হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ৪৫ জন সাজা থেকে খালাস পান। তবে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না পাওয়ার কারণে আপিল করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আইনজীবীরা।

অন্যদিকে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলা এখনো নিম্ন আদালতের গণ্ডিই পেরোতে পারেনি। এই মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।