প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ‘চিন্তাভাবনার’ যে খবর সামনে এসেছে, এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের বরাতে তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংবাদ ছেপেছে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম।
বাংলাদেশের মত ভারতের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম খবরটি ছেপেছে বিবিসি বাংলা সংস্করণকে উদ্ধৃত করে।
তবে এর বাইরেও কিছু ‘তথ্য’ দিয়েছে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, যেগুলোর মধ্যে স্টারলিংককে বাংলাদেশে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙা কিংবা ‘মানবিক করিডোরের’ মত বিষয় আছে।
কেউ কেউ লিখেছে, মুহাম্মদ ইউনূস ‘সার্বিক বিষয়ে’ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার খসড়াও তৈরি করে ফেলেছিলেন।
কেউ কেউ লিখেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইউনূস ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মধ্যে ‘বিরোধ’ তৈরি হয়েছে।
কোনো কোনো ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিষয়টি দেখিয়েছে ‘নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতার লড়াই’ হিসেবে।
হিন্দুস্তান টাইমস শিরোনাম করেছে ‘নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও ইউনূসের মতবিরোধ’।
ঢাকা ও নয়া দিল্লির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কর্মকর্তার বরাতে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, “নির্বাচনের রোডম্যাপ ঠিক করতে না পারা এবং রাখাইনে করিডোর দেওয়া না দেওয়া নিয়েই মূলত সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে।”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, “অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে অর্থনীতি সামলাচ্ছেন, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেনাপ্রধান। এছাড়া ইলন মাস্কের স্টারলিংকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার মত ‘স্পর্শকতার’ বিষয় নিয়েও জেনারেল ওয়াকার উদ্বেগ জানিয়েছেন।”
একই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, “সেনাবাহিনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে বেশির ভাগ মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে ইউনূসের চারপাশের লোকদের কিছু সিদ্ধান্ত ঘিরে, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের কারণে, যিনি করিডোরের প্রস্তাবকে সামনে এনেছেন বলে প্রচার রয়েছে।”
ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘হিন্দু’ শিরোনাম করেছে, ‘সেনাপ্রধান ওয়াকার বনাম প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস: ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতার লড়াই শুরু’।
সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, “কমান্ডিং অফিসারদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় জেনারেল ওয়াকার বলেছেন যে, যেসব সমঝোতার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল, ইউনূসের এখনকার অনেক সিদ্ধান্তই তার অংশ ছিল না।”
টাইমস অব ইন্ডিয়ার শিরোনাম—“বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বিদায় নিচ্ছেন?’
বিবিসি বাংলাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, ‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন।’
বিবিসি বাংলার বরাতে একই ধরনের খবর ছেপেছে আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ইন্ডিয়া টুডে শিরোনাম করেছে— “পদত্যাগের হুমকি ইউনূসের, ঢাকা আবার বড় ধরনের বিক্ষোভের শঙ্কা’।
‘সরকারের বিভিন্ন বিভাগ’ ও ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টকে’ উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, “এরই মধ্যে ছাত্রনেতারা ঢাকায় প্রতিবাদ জানাতে এবং সেনানিবাস অভিমুখে পদযাত্রা করতে যুবসমাজ ও ইসলামপন্থিদের সংগঠিত করার কাজ করছেন।”
সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা থেকে শুরু করে নারীদের সংস্কার কার্যক্রম স্থগিত করা, কিংবা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবন ভাঙচুর— সব কিছুই হয়েছে ‘ছাত্রজনতা’ ও ইসলামপন্থিদের ইচ্ছামত। আর প্রতিটি পরিকল্পনায় জড়িত না থাকলেও ইউনূস নীরব থেকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন।”
আনন্দবাজার পত্রিকা এ নিয়ে দুটি প্রতিবেদন ছেপেছে। একটির শিরোনাম ‘পদত্যাগ করতে চাইছেন ইউনূস, দেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর দাবি নাহিদ ইসলামের’।
তাদের আরেকটি শিরোনাম, ‘তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে গড়া হোক অন্তর্বর্তী সরকার! জাতির উদ্দেশে ভাষণের খসড়াও তৈরি করে ফেলেছিলেন ইউনূস’।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ খবরে বলা হয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন। তার আগে ওই দিন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন ইউনূস। সেখানেই তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বলে খবর।
“বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, বৈঠকেই ইউনূস নতুন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। জানিয়ে দেন, সেখানে তিনি আর থাকতে চান না। এমনকি বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করতে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তা জানাতে চেয়েছিলেন ইউনূস। আপাতত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রয়েছে।”
নাহিদ ইসলাম ও বিবিসি বাংলাকে উদ্ধৃত করে ইউনূসের পদত্যাগের ‘ভাবনার’ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম— ট্রিবিউন, ইকোনমিক টাইমস, দ্য প্রিন্ট ও পিটিআইও।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। খোদ সরকারের উপদেষ্টারাও ভারতীয় মিডিয়ার অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম