গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রামনাবাদ নদীর অব্যাহত
ভাঙ্গনে ক্রমশ: বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি, যোগাযোগ সড়ক, গাছ-পালা,
ঘর-বাড়ী, মাছের ঘের-পুকুর সহ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। এতে লালুয়া ইউনিয়নের
মানচিত্র ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে । আর ভিটা মাটি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে
পড়ছে ওই এলাকার কয়েকশ’ পরিবার। এছাড়া বর্ষা মৌসুম হওয়ায় ভাঙা বেড়িবাঁধ
দিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে কৃষিকাজ।
অস্বাভাবিক জোয়ারে দূর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, লালুয়া ইউনিয়নের মোট আয়তন ছিল ৪৯
বর্গকিলোমিটার। খরস্রােতা রামনাবাদ নদীর ভাঙ্গনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯
বর্গকিলোমিটারে। ওই ইউনিয়নের ৪৭/৫ পোল্ডারে সাত কিলোমিটারের অবস্থা খুবই
নাজুক। অব্যাহত ভাঙনে যে কোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে চাড়িপাড়া,
নাওয়াপাড়া, বানাতিপাড়া, ১১নং হাওলা, চৌধুরীপাড়া, নয়াকাটা, মুন্সীপাড়া,
চান্দুপাড়া, হাসনাপাড়া, চর-চান্দুপাড়া ও পশরবুনিয়া গ্রাম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রামনাবাদ নদীর প্রবল স্রােতে চাড়িপাড়া গ্রামের
ভাঙ্গা বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ দিয়ে জোয়ারের সময় লোনা পানি পানি লোকালয়ে
প্রবেশ করছে। নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে ওই ইউনিয়নের
ভূখন্ড। এতে প্রতিনিয়ত ভূমিহীন হয়ে পড়ছে নতুন নতুন পরিবার। টেকসই বন্যা
নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মানসহ যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহন না করলে এই জনপদটি
পুরোপুরি বিলিন হওয়ার শংকা করছে এলাকাবাসী।
চারিপাড়া গ্রামের রফিক হাওলাদার জানান, ’এক সময়ের বিত্তশালী পরিবারের
সন্তান হয়েও এখন নিঃস্ব হয়ে চারিপাড়া গ্রামের ভাঙা বাঁধের পাশে আশ্রয়
নিয়েছে তাদের পরিবার। তাদের পূর্ব পুরুষরা ১০০ বছর ধরে নদী গর্ভে বিলীন
হওয়া বাড়ীতে বসবাস করে আসছিল। তাদের বাড়ীর সামনে এক একর জমি ছিল, সবই
নদীতে বিলিন হয়েছে। এ বছর ভাঙ্গনের পরিমান অনেক বেশি। এখন বার্ধক্যে এসে
নদীতে মাছ ধরে চলে তার সংসার।’
নাওয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, ’নদীর ভাঙ্গনে সব শেষ হয়ে গেছে।
চাষাবাদ করার মত জমি নাই।’
চারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান
ফোরকান জানান, ’স্কুলের চারপাশে কোন বেরিবাঁধ নেই। জোয়ারের সময় চাড়িপাড়া
, চৌধুরিপাড়া, নয়াকাটা, বানাতিপাড়া গ্রামের ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে
পারেনা। আমাদের নিজেদেরকেও ইঞ্জিন নৌকার সাহায্যে স্কুলে যেতে হয়।’
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, ’নদী
ভাঙ্গনে চারিপাড়ার অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন
করছে। বিয়ষটি জনগনের স্বার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে
জানানো হয়েছে। তারপরও সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’র কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী
ওয়ালিউজ্জামান জানান, ’লালুয়া ইউনিয়নে পায়রা সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙরের
জেটি নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া রয়েছে। এ কারনে সেখানে এখন
বাঁধসহ অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কাজ বন্ধ । চারিপাড়া গ্রামে পায়রা সমুদ্র
বন্দরের কাজ শুরু হলে গোটা এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। তখন আর
এই দূর্ভোগ থাকবে না।’