গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রিকশা চালক নাসির হাওলাদারে
মেয়ে মীম নিজের পড়াশুনার ফাঁকে গ্রামে প্রাইভেট টিউশন’র মাধ্যমে কলেজের
খরচ চালিয়ে এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ধার দেনা করে তার
পরিবার তাকে এইচএসসিতে আলহাজ্ব জালালউদ্দিন কলেজে ভর্তি করাতে পারলেও
আর্থিক সংকটে মিম’র উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন এখন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
উপজেলার ধূলাসার ইউনিয়নের চর চাপলী গ্রামের মীমের ঘরে অসুস্থ্য মা জাকিয়া
বেগম এখন প্রায় মৃত্যুশয্যায়। প্রায় দুই মাস হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা
করালেও আর্থিক সংকটে বর্তমানে ঘরে বসে কোন রকম চিকিৎসা হচ্ছে তার। বাবা
রিকশা চালিয়ে যা পায় তা দিয়ে অসুস্থ্য মায়ের ঔষধ, দু’মুঠো ভাত যোগাড় ও
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া ভাই আলাইহীমের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে মীমকে কলেজে
পড়ানো তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই ঘরে রান্নার কাজ, অসুস্থ্য মায়ের
সেবা করে শিক্ষা জীবনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে গ্রামে কয়েকটি প্রাইভেট
পড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলেও এখনও বই কেনা হয়নি মীমের। নেই কলেজে যাওয়ার কোন
ভালো পোষাক। মায়ের অসুস্থ্যতায় চিকিৎসা করাতে না পারার দুঃখে ভবিষ্যতে
তার মায়ের মতো কেউ যাতে কষ্ট না পায় তাই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন মীমের।
কিন্তু মেধাবী এ মীমের স্বপ্ন পূরনে কে তার পাশে দাড়াবে? এমন অনেক প্রশ্ন
ভিড় করে মিমের দু:শ্চিন্তার জগতে। মাত্র ১০ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণি পাশ
করে প্রাথমিকের গন্ডি পেরোলেও মানসুরা মীম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে
পারেনি আর্থিক দৈন্যতায়। তার সহপাঠীরা যখন বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতো, ঠিক
সেই সময়ে তাকে যেতে হয়েছে সুতার কারখানায়। দুই বছর সুতার কারখানায় দিনরাত
কাজ করার কারনে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া হয়নি মীমের। ক্ষুধা দারিদ্রতার
সাথে যুদ্ধ করে দুই বছরের জমানো কিছু টাকা দিয়ে পরিবারের অসম্মতিতে অষ্টম
শ্রেণিতে ভর্তি হয় মীম।
মানসুরা মীম জানায়, নিজ ইচ্ছা না থাকলে এখন আমি হয়তো কোন কারখানার শ্রমিক
হতাম। শিক্ষা জীবনের দুই বছর ঝড়ে গেছে কারখানায় কাজ করে। ইচ্ছে আছে
ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু কে পূরণ করবে আমার স্বপ্ন? আমার বাবা রিকশা চালায়,
মা ঘরে মৃত্যুশয্যায়। কলেজে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু বই, খাতা কিনতে পারিনি।
এতো কষ্ট করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলাম। কিন্তু এখন ?
মীমের অসুস্থ্য মা জাকিয়া বেগম বলেন, ক্লাস ফাইভ পাশ করার পর টাকার অভাবে
মীমকে সিক্সে ভর্তি করাতে পারিনি। দুই বছর ঢাকায় সুতার কারখানার কাজ করে
১০ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেছে সে। এবার কষ্ট করে ভালো পাশ করেছে।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে মীম। টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছি না,
সেখানে মীমকে পড়াবো কীভাবে?
চাপলী গ্রামের স্কুল শিক্ষক মো. নুরুন্নবী জানান, মীম খুবই মেধাবী।
কিন্তু ওর পরিবারে যখন ঠিকমতো চুলো জ্বলেনা, সেখানে মীমকে কীভাবে পড়াবে এ
দু:শ্চিন্তা তাদের। এখনও বই কিনতে পারেনি। তাই একমাত্র মানুষের সহায়তাই
পারে মীমের শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিতে।