দর্পণ ডেস্ক : রীতিমতো কড়া ভাষায় দলের নেতাদের আরও একবার হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল নদীয়ার এক জনসভায় ভাষণ দিতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই একথা বলেন তিনি।

কড়া ভাষায় নেতাদের নির্দেশ দিলেন, সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কাট মানি নেওয়া বন্ধ করুন। নয়তো জেলে যান। দলে থাকতে গেলে এসব সরিয়ে রেখে কাজ করতে হবে আপনাদের। প্রসঙ্গত, এই জেলাতেই দুটি লোকসভা আসনের একটিতে বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছে শাসকদল।

জনসভায় দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখার পরেই স্থানীয় এর তৃণমূল নেতা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বারবার নির্দেশ দিচ্ছেন, দুর্নীতি রুখতে কাট মানি না নেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। দলের কেউ হাতনাতে ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়লে শাস্তিস্বরূপ গ্রেফতার করা হবে তাঁকে, এমনও নির্দেশ আছে তাঁর।

রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ এবং মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে এই নির্দেশ পাওয়ার পরেই দেলর বেশ কিছু নেতা কাট মানি ফেরত দিয়েছেন বলে খবর। প্রসঙ্গত, এই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন বীরভূম, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, বর্ধমান, মালদা, পুরুলিয়া, নদীয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতে নব নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এবং এই জেলাগুলিতেই জোরালো বিক্ষোভ দেখা গেছে।

সাম্প্রতিক একটি বৈঠকে মমতা জানিয়েছেন, চোরদের দলে রাখতে চান না তিনি। আমি কিন্তু দল থেকে সরিয়ে দেব হাতনাতে ধরতে পারলে। তার আগেই বরং এঁরা চলে যান অন্য দলে। সরকারি প্রকল্প দরিদ্রের জন্য। সেই সুবিধে পাওয়ার অধিকার আছে তাঁদের। তারপরেও গৃহঋণ পাইয়ে দেওয়ার বদলে ঋণের ২৫ শতাংশ টাকা ঘুষ হিসেবে নিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। এই সব বরদাস্ত করা হবে না।

এদিকে মমতার এই নির্দেশে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের অন্দরেই। নদিয়ার এক প্রভাবশালী নেতার কথায়,মুখ্যমন্ত্রী এভাবে কাউকে অপমান করতে পারেন না। আমরা যদি টাকা নিয়েই থাকি তাহলে তার ভাগ দিতে হচ্ছে উপর মহলের নেতা-মন্ত্রীদের। তাঁরাও কি তাহলে টাকা ফেরত দেবেন?

শতাব্দী রায়ের মতো নেত্রীর দাবি, এই নির্দেশে দলের লোকেরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তার যুক্তি, দিদি  ‘কাট মানি’ রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন এটা ভাল কথা, কিন্তু এই কাট মানি মানুষকে ফেরাতে গেলে আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ এই ধরণের কাট মানি যারা নিয়ে থাকেন তাদের কেউ কেউ সামনে এলেও এর নেপথ্যে একটা বড় চক্র থাকে।ফলে এই কাট মানি ফেরাতে হলে গোটা চক্রের অংশীদারদের সামনে আসতে হবে।  অবশ্যই মানুষকে এই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, কিন্তু ইতিমধ্যেই যাঁদের ঘরে এই টাকা ঢুকে গেছে সেই টাকা কিভাবে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব! আর এভাবে দল ছেড়ে সদস্যরা চলে গেলে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে শাসকদল।

প্রসঙ্গত, রাণাঘাটের আসন হারানোর পরেই বন্ধ দরজার পেছনে দলীয় সদস্যদের নিয়ে আড়াই ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই নাকি কিছু নেতা স্বীকার করেন, তারা বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজেদের দলকে হারিয়েছেন। এরপরেই দুর্নীতি রুখতে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিতে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উঠে আসে কাট মানি নেওয়ার প্রসঙ্গও। একই সঙ্গে তিনি দলের সদস্যদের ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বলে খবর।