দর্পণ ডেস্ক : ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর যুবরাজ সালমানের এটাই ছিল প্রথম পাকিস্তান সফর। এই সফরের পরেই সরাসরি ইসলামাবাদ থেকে দিল্লিতে যাওয়ার কথা ছিল সালমানের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরাসরি পাকিস্তান থেকে দিল্লি সফর না করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীর ইস্যু এবং সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে চায় রিয়াদ। এই ইস্যুতে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতীয়দের সংবেদনশীলতা উপলব্ধি এবং দিল্লির কৌশলগত তাৎপর্য অনুধাবন করেই তিনি সরাসরি পাকিস্তান থেকে দিল্লি সফর বাতিল করে দেশে ফিরে গেছেন। তবে মঙ্গলবার রাতে ভারতে পৌঁছানোর কথা ক্রাউন প্রিন্সের।

জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলতে থাকা ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ভারতে পা রাখার আগেই সৌদির তরফ থেকে এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সোমবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মাঝে উত্তেজনা লাঘবের চেষ্টা করছে সৌদি আরব। দুই দেশের বিবদমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায় কিনা তা দেখবে রিয়াদ।’

দু’দিনের পাকিস্তান সফরে মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তানের সঙ্গে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আর্থিক সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। জরুরি ভিত্তিতে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। সে কারণে তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।

এর মধ্যেই সৌদির সঙ্গে বিশাল অংকের এই চুক্তি দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধুই বিনিয়োগই নয় বরং পাকিস্তানের ২ হাজার ১০৭ জন বন্দিকে তাৎক্ষণিক মুক্তিরও নির্দেশ দিয়েছেন যুবরাজ সালমান। বর্তমানে প্রায় তিন হাজার পাকিস্তানি বন্দি সৌদির বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন।

অপরদিকে, বুধবার ভারতের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর সেখান থেকে তার চীনে সফর করার কথা রয়েছে। চীন সফরের মাধ্যমেই তার এশিয়া সফর শেষ হবে।

বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ এবং আবাসন খাতে দিল্লি এবং রিয়াদের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে একঘরে করার প্রচেষ্টার মধ্যেই সৌদি প্রিন্সের পাকিস্তান সফরকে বিপত্তি হিসেবে দেখছে না ভারত। কারণ তার এই সফরের পরিকল্পনা কাশ্মীরের পুলওয়ামার হামলার আগেই গৃহীত হয়েছে।

ভারতীয় একটি সূত্র বলছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাবাসন থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তাই সবদিক থেকে ভারতের নয় বরং পাকিস্তানেরই চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে।

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্য নতুন করে উত্তেজনা তৈরির পথ বন্ধ করতেই হয়তো সরাসরি ইসলামাবাদ থেকে দিল্লি সফরের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন যুবরাজ সালমান। ইসলামাবাদ থেকে তিনি দেশে ফিরে গেছেন। পরবর্তীতে আজ রাতেই রিয়াদ থেকে দিল্লি পৌঁছাবেন তিনি। এতে করে সরাসরি তার এই সফর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে নতুন কোন উত্তেজনা তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না।

সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে একদল উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারত সফর করবেন বিন সালমান। দেশটির বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দেশটির প্রথম সারির ব্যবসায়ী সালমানের সফরসঙ্গী হবেন।