দর্পণ ডেস্ক : ইরান আতঙ্ক সৃষ্টি এবং দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমেরিকা ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে ইরান বিরোধী দু’দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল।
সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন এটা ইরান বিরোধী সম্মেলন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত ১ জানুয়ারি বলেছিলেন, পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিষয়টি হবে পোল্যান্ড সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়। মার্কিন সরকার নজিরবিহীনভাবে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। আমেরিকা ওয়ারশ সম্মেলনের আয়োজন করে এবং এতে অংশ নেয়ার জন্য ৬০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানোর পর ভেবেছিল ইরানকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে। যাতে পশ্চিম এশিয়ার ব্যাপারে তেহরান তার নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। কিন্তু ইউরোপ ও ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে সইকারী দেশগুলোর প্রবল বিরোধিতার কারণে আমেরিকা তার ইরান বিরোধী নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়।
প্রতিকূল পরিস্থিতির বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্মেলন শুরুর আগেই কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানের ব্যাপারে কঠোর নীতি অবস্থান থেকে সরে এসে এক বিবৃতিতে বলেছিল, পশ্চিম এশিয়ায় চলমান সংকট, ক্ষেপণাস্ত্র বিস্তার রোধের উপায়, সাইবার নিরাপত্তা, জ্বালানি হুমকি ও উগ্রপন্থা মোকাবেলার বিষয়টি সম্মেলনে অগ্রাধিকার পাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ইরানের বিষয়টি এড়িয়ে যান। ওয়ারশ সম্মেলনেও ইরান ইস্যুতে বিশ্বের দেশগুলোর বিরোধিতার কারণে ওয়াশিংটন এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছে যে এ সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাথানি তাক পোল্যান্ডে দুদিনের সম্মেলনের ব্যাপারে বলেছেন, এটি ছিল ব্যাপক ভিত্তিক আলোচনা এবং যা গুটি কয়েক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
ওয়ারশ সম্মেলনে চীন ও রাশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ অংশ নেয়নি এবং জার্মানি ও ফ্রান্সের ভূমিকাও ছিল অত্যন্ত দুর্বল।
অন্যদিকে ইসরাইল থেকে শুরু করে রাজতন্ত্র শাসিত আরব দেশগুলো ছিল এ সম্মেলনের কট্টর সমর্থক এবং এ দেশগুলো চেয়েছিল সম্মেলনের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। এভাবে ইরান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র মতবিরোধের কারণে আমেরিকা তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
আমেরিকা ওয়ারশ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ঠেকানো এবং দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের জন্য ব্যাপক পীড়াপীড়ি করেছিল। কিন্তু অন্য প্রভাবশালী দেশের ব্যাপক বিরোধিতার কারণে ওয়াশিংটন শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটে এবং ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি ওয়ারশ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
যাইহোক, বিশ্বের দেশগুলো ইরান ইস্যুতে পোল্যান্ড সম্মেলনকে খুব একটা গুরুত্ব না দেয়ায় আমেরিকা এখন এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছে যে সম্মেলনের বিবৃতি কেবল আমেরিকা ও পোল্যান্ডের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হবে। এ থেকে বোঝা যায়, ইরানের বিরুদ্ধে সব দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।