মোঃশাহাগির মৃধা , সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের বর্তমান সাংসদ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এখন অতীত ভুলের খেসারত দিচ্ছেন। যার ফলে নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয় হয়েও ভোটের মাঠে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন এখন তিনি।

সাংসদ জিয়াউল হকের ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি ছিলো, এই ভোটের আগে নিজের বড় মেয়ের জামাই অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়াকে বিশ্বাস করা। রেজাউল ইসলাম জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের যুব বিষয়ক উপদেষ্টা। lআর সেই কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে তাকে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে। দীর্ঘ দশটি বছর নিজের হাতে গড়া এই মাঠে এখন জামাই এসে ভাগ বসিয়েছেন।

শুধু তা-ই নয়, এই আসনে টানা দশটি বছর “লাঙ্গল” প্রতীকটি আগলে রাখেন জিয়াউল হক মৃধা। শ্বশুরের কাছ থেকে কৌশল খাটিয়ে সেই “লাঙ্গল” প্রতীকটিও কেড়ে নেন জামাই রেজাউল। জিয়াউল হকের সেই ভুলের কারণে এই আসনে তারই প্রতিদ্বন্দ্বী এখন মেয়ের জামাই রেজাউল ইসলাম। এমনকি জামাই কৌশলে দলীয় মনোনয়ন থেকেও শ্বশুরকে বঞ্চিত করেন।
শেষপর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকতে সাংসদ জিয়াউল হক স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন। সেখানেও মেয়ের জামাই তার পিছু ছাড়েনি। শ্বশুরের বিরুদ্ধে আদালতে নির্বাচনী আচণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করিয়েছেন।

এদিকে জিয়াউল হকের কাছ থেকে অতীতে যারা নানা সুবিধা নিয়েছেন, এখন ভোটের মাঠে তারা কেউ কেউ প্রকাশ্যে বিরোধীতা করছে। অনেকে জামাই রেজাউল ইসলামের পক্ষ নিয়েছে।

এতোকিছু হওয়ার পরও এমপি জিয়াউল হক মৃধা দাবি করেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি সবসময় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা ভেবেছেন। সাধারণ মানুষের উন্নয়নের চিন্তা করে প্রায় সকল কিছুই তিনি নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তবে অতি কাছের মানুষের দ্বারা তিনি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা তিনি কখনও ভাবেননি।

স্থানীয় মানুষদের আক্ষেপ, যেই লোকটি টানা দশ বছর দাপটের সাথে এখানে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। এই দশ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। সেই ক্লিন ইমেজের লোকটি আজ ভোটের মাঠে শুধু জামাই রেজাউল ইসলামের কারণে নানা প্রশ্নের শিকার হচ্ছেন। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।

সাংসদ জিয়াউল হকের পরিবার, রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জিয়াউল হকের সর্বশেষ বড় ভুলটি ছিল একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহুর্তে তাঁর বড় মেয়ের জামাই রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়ার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। যার খেসারত তিনি এখন হারে হারে টের পাচ্ছেন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জামাই রেজাউল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে নির্বাচন করার কথা ছিল। আর শ্বশুর জিয়াউল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে।

মহাজোটের সাথে আসন বন্টনে একসময় বুঝতে পারেন রেজাউল ইসলাম যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে তিনি নমিনেশন পাচ্ছেন না। তখনই তিনি শ্বশুরের আসনে নজর দেন। বিষয়টি টের পেয়ে বিভিন্ন মহল সাংসদ জিয়াউল হককে অবহিত করলেও তিনি জামাইকে অবিশ্বাস করেননি। তিনি জোর গলায় জবাব দেন, এটা হতেই পারে না। সে আমার মেয়ের জামাই হলেও আমার সন্তান সমতুল্য। আমার এতোদিনের তৈরি মাঠ সে নষ্ট করতে আসবে না।

একসময় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়ার সাথে যোগাযোগ করেন। তবে তিনিও তখন শ্বশুরের সুরে কথা বলেন। সেইসময়ে রেজাউল ইসলাম বলেছিলেন, আমি কি বাড়িঘর ছাড়া মানুষ। নিজের আসন ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি এলাকার আসনে নির্বাচন করতে যাবো। জিয়াউল হক আমার মুরুব্বি। তার এতোদিনের গুছানো মাঠ আমি নষ্ট করতে যাব কেন। তাছাড়া আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করা মানুষ, সরাইল-আশুগঞ্জের মতো জায়গায় গিয়ে আমাকে নির্বাচন করতে হবে, তা আমি কল্পনাও করি না।

তবে শেষপর্যন্ত এমপি নির্বাচিত হওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে জামাই রেজাউল ইসলাম তার সেইসব কথা থেকে ফিরে এসেছেন এবং এই আসনে “লাঙ্গল” প্রতীকে শ্বশুরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন।
কিছুদিন আগে শ্বশুরকে ছাড় দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন জামাই, এমন একটি কথা চাউর হয় এলাকায়। এর জবাবে গণমাধ্যমকে জামাই রেজাউল ইসলাম জানান, শ্বশুরবাড়ির মেয়ে ফেরত দেওয়া যায়। যৌতুক ফেরত দেওয়া যায়। তবে নমিনেশন ফেরত দেওয়া যায় না। আমার নমিনেশন শ্বশুরবাড়ির দেওয়া যৌতুকের ‘টেলিভিশন’ না, যে চাইলেই শ্বশুরকে ফেরত দিয়ে দিব।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত দশ বছরে টি.আর/কাবিখা-কাবিটা সহ নানা উন্নয়ন কাজে সাংসদ জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। আর এটি সম্ভব হয়েছে সকল উন্নয়নকাজের বরাদ্দ সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা নিজ হাতে বন্টন করেছেন। অপব্যবহার এড়াতে এসব বন্টনের দায়িত্ব কোনো নেতাকর্মীর হাতে দেননি। যার কারনে কিছু ঘনিষ্ঠ কর্মী তার ওপর নাখোশ। তাদের মধ্যে অনেকে এই নির্বাচনে জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।এদিকে জামাই শ্বশুরের দ্বন্ধে সুবিধাজনক অবস্হানে রয়েছেন বিএনপির বয়োবৃদ্ধ সাবেক এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া।