দর্পণ ডেস্ক : গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ার কারণে মেয়েদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। বিশেষ করে ইউএসএ, হাঙ্গেরি, ডেনমার্ক, চীন এবং নিউজিল্যান্ডসহ ২৮টি দেশে এই প্রবণতা দেখা গেছে। জীবাণুঘটিত রোগ না হলেও ফুসফুসের ক্যানসার একটি ভয়াবহ ব্যাধি।

প্রতিবছর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ইদানীং মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিলারাও অধিকসংখ্যক হারে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের ১২ শতাংশ ভুগছে ফুসফুস ক্যানসারে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের নারীরাও যুক্তরাষ্ট্রের সমান হারে ফুসফুস ক্যানসারে ভুগছেন। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে তারা। ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য অন্যতম দায়ী ধূমপান।

যে কারণে যদিও রোগটি তুলনামূলকভাবে পুরুষদের বেশি, ইদানীংকালে নারীদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারাও উল্লেখযোগ্য হারে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিরাই নয় নগরায়নের এই বিশ্বে কালো ধোঁয়াও ফুসফুসে ক্যানসারের কারণ হতে পারে। ব্রেস্ট ক্যানসারের পরই বিশ্বব্যাপী নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ফুসফুস ক্যানসারে। ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় শীর্ষ কারণও এটি। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের ব্যাপকতার কারণ মূলত ধূমপান ও মদ্যপান।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, পরোক্ষ ধূমপান ও মাটির চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণেই বেশি হারে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা। জর্দা ও গুলের ব্যবহারও নারীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের হার জানতে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ওপর জরিপ পরিচালনা করছে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৯ জন নারী ক্যানসার রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। তাতে দেখা গেছে, এ রোগীদের ১২ শতাংশ ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত।

চিকিৎসকরা জানান, দীর্ঘদিন কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, ক্রমে ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ। তাই তিন সপ্তাহের বেশি কাশি হলে যক্ষ্মার তিনটি পরীক্ষায় যদি যক্ষ্মা শনাক্ত না হয়, তাহলে সিটি স্ক্যান করতে হবে। সিটি স্ক্যানে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হলে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হলে শুধু অস্ত্রোপচার করলে রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা তথ্য বলছে, দেশে ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। আর নারী-পুরুষ মিলিয়ে ফুসফুস ক্যানসারে ভোগার হার ১৮ শতাংশ। বিভিন্ন বয়সী ১১ হাজার ক্যানসার আক্রান্ত নারী ও পুরুষের ওপর ওই গবেষণা পরিচালিত হয়।