দর্পণ ডেস্ক : শীতে ত্বক ও চুলের যত্ন শীতকালে সৌন্দর্যপিয়াসীদের কিছু না কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা অনেকটা হ্রাস পায়। আর বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বকই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। ত্বকের কোমলতা ও মসৃণতা কমে গিয়ে খসখসে হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও চুলের সমস্যাও বৃদ্ধি পায় যেমন- খুশকি, বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং চুল পড়া ইত্যাদি।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী কিছু প্যাক
দেহের সব থেকে স্পর্শকাতর অঙ্গ হল ত্বক। ত্বকের দুটি স্তর। প্রথমটি হল উপরের স্তর, দ্বিতীয়টি হল ভেতরের স্তর । বহিরাবরণের উপরের অংশের কোষগুলো মৃত থাকে। যাদের ত্বক স্বাভাবিক এবং মিশ্র তারা ত্বকে শাইনি এবং গ্লো লুক আনার জন্য ২ চা-চামচ দুধের সর, ১ চা-চামচ মধু দিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। আবার ২ চা চামচ দুধের সর, ১ চা-চামচ মধু দিয়ে ম্যাসাজ করার পর একটি প্যাক (ডিমের সাদা অংশ, ১-৪ চা চামচ তিলের তেল, ২ ফোঁটা লেবুর রস) পুরো মুখে লাগালেও ভালো উপকার পাওয়া যায়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওটমিল ৪ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ একসঙ্গে করে, আগুনে ফুটিয়ে নিয়ে অল্প ঠাণ্ডা হলে তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর ওয়াটার বেইজড ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু ১ চা চামচ, দুধের সর ১ চা চামচ এবং গাঁদা ফুলের পেস্ট ১ টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এরপর ডিপ ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য সয়াবিনের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, দুধ আধা চা চামচ, মধু আধা চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এর পর ডিপ ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
শুষ্ক চুলের জন্য : রোদে পুড়ে যাওয়া চুলের জন্য মধু অনেক উপকারী। ১-২ কাপ মধু, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং একটি ডিমের কুসুম একসঙ্গে মিশিয়ে মাসে ২-৩ বার চুলে লাগান। মধু এবং অলিভ অয়েল চুলের মোয়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং ডিমের কুসুম চুলকে সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা করবে।
তৈলাক্ত চুলের জন্য : ১ কাপ শিকাকাই পাউডার,
১-২ কাপ মেথি গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে রেখে দিন। মাথায় ব্যবহারের সময় এই মিশ্রণ থেকে কিছুটা নিয়ে ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান এবং ১ ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন। নরমাল বা স্বাভাবিক চুলের জন্য ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম দুটোই ব্যবহার করুন, তৈলাক্ত চুলের জন্য সাদা অংশ এবং রুক্ষ চুলের জন্য ডিমের কুসুম ব্যবহার করুন।
হাত ও পায়ের যত্ন : শীতের হাওয়া বইতে শুরু করলেই অনেকের পায়ের চামড়া বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি ফাটা আরম্ভ হয়। অনেকের হাতের আঙুলের ডগাও ফাটে। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে শীতের শুরু থেকেই চালের গুঁড়ার সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে হাত ও পায়ে ৫-৬ মিনিট স্ক্রাব করুন এবং স্ক্রাব শেষে অলিভ অয়েল, লেবুর রস ও গ্লিসারিন সমপরিমাণে মিশিয়ে হাতে ও পায়ে লাগান। এটি চাইলে কাচের জারে রেখে সংরক্ষণও করতে পারেন। সর্বোপরি, এ ঋতুতে সুষম খাবার গ্রহণের চেষ্টা করুন। শীতে বাজারে নানারকম তরতাজা সবজি পাওয়া যায়, যা থেকে অনায়াসে প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
খুশকির জন্য : যাদের খুশকির সমস্যা অল্প তারা গাজর পেস্ট এবং লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার চুলে এ প্যাকটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। যাদের লাগাতার খুশকির সমস্যা তারা মেথি দানা পেস্ট ২ চামচ এবং টক দই ৪ টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান এবং ১ ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি চুলে প্রতিদিন লাগাতে হবে। মেথিকে আগের রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। শীতে ত্বকের সমস্যা সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. মীর নজরুল ইসলাম বলেন, শীতকালে শুষ্ক ত্বকসহ ত্বকের নানা সমস্যা হতে পারে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় শরীর ও মুখের ত্বক শুকিয়ে যায়। পায়ের তলা, অনেকের হাতও ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া শীতকালে নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। যেমন- চুলকানি, একজিমা, ঠোঁটের কোণায় ঘা হওয়া, জিহ্বায় ঘা, মাথায় খুশকি বেড়ে যেতে পারে। শীতে ত্বকের এসব সমস্যা প্রতিরোধে সময়মতো কিছু ব্যবস্থা নিলে ত্বককে রক্ষা করা যায়।
শীতে ত্বকের সমস্যায় যা করবেন-
* হাত-পায়ে মোজা ব্যবহার করতে হবে।
* সাবান ব্যবহার করার পর তেল বা লোশন লাগানো উচিত। কারণ সাবান ত্বককে শুষ্ক করে দেয়।
* নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
* হাত-পায়ে গ্লিসারিন ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
* অ্যান্টিসেপটিক ওয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
* কার্বোলেটেড ভেসলিন ও স্টেরাইল অলিভ অয়েল এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।