দর্পণ ডেস্ক : অনেক প্রাকৃতিক উপাদান ত্বক ও চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সুন্দর করে। ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু, সাবান সব কিছুতে প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ থাকে এখন। প্রাকৃতিক বলতে ফুল, ফল, সবজি, গাছের নানা অংশের নির্যাস ইত্যাদি বোঝায়। একে ভেষজ উপাদানও বলে।
তবে বাজারে যেসব নিত্যব্যবহার্য জিনিসে প্রাকৃতিক উপাদান থাকে বলে বিজ্ঞাপিত হয়, সেগুলোতে একই সাথে প্রচুর রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত থাকে। সুগন্ধি, সংরক্ষণের উপাদান, রং, নানা উপাদান নিয়েই একটি পণ্য তৈরি হয়।
প্রাকৃতিক উপাদান অনেক সময় যেমন উপকারী হয়, তেমনি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। চটকদার বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে ত্বকের জন্য কোনো পণ্য কেনা ঠিক নয়। যে প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করবেন সেটার কী প্রভাব আপনার ত্বকের ওপর পড়বে তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
জোজোবা : জোজোবার অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মতো গুণ রয়েছে। সূর্যরশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক ও খসখসে ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে জোজোবা।
প্রোপোলিস : এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
টিট্রি তেল বা মেলালিউকা : এটি ক্ষত সারায়, জীবাণুনাশক এবং ত্বককে মসৃণ করে।
উইচহেজেল : ত্বককে শুষ্ক করে। তৈলাক্ত ত্বকে তাই এটি ব্যবহৃত হয়।
বেশ কিছু ভেষজ উপাদান সরাসরি আমরা মুখে ও শরীরে ব্যবহার করে থাকি। এগুলো ব্যবহার করা হয় ত্বকের রং ফর্সা করার জন্য ও ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলার জন্য।
স্যান্ডালউড বা চন্দন : বহু বছর ধরে চন্দন ব্যবহার হয়ে আসছে। চন্দন কাঠের গুঁড়া গোলাপজলে মিশিয়ে ত্বকে লাগানো হয়। এ ছাড়া চন্দন তেলও ব্যবহার করা হয়।
চন্দনের ব্যাপারে সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ অদ্ভুত এক ধরনের কালচে করে তুলতে পারে ত্বক। একে ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলেন বেরলক মেলানোসিস।
কাঁচা হলুদ : ত্বকের রং ফর্সা করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে কাঁচা হলুদ। কাঁচা হলুদ বেটে দুধ বা সরের সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগানো হয়। বলা হয়, কাঁচা হলুদ গায়ের রং ফর্সা করে। কাঁচা হলুদের কিছু প্রদাহনাশক গুণ আছে। কাঁচা হলুদ কালো ত্বক ফর্সা না করলেও ত্বকের জন্য ভালো এবং ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে।
তুলসি : তুলসিপাতা বেটে ত্বকে লাগানো হয়। এতে ত্বক তরতাজা থাকে।
নিম : নিমপাতার ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। নিমের তেলও ব্যবহার করা হয়। নিমের জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে। নানা রকম ত্বকের অসুখের চিকিৎসায়ও নিম ব্যবহার করা হয়।
মসুরডাল : মসুরডাল ভিজিয়ে রেখে বেটে তারপর মুখে লাগানো হয়। মসুরডাল এসট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
বেসন : বেসনও মসুরডালের মতো কাজ করে। তবে বেসন ত্বক পরিষ্কার করা হয়। তাই ক্লিনজারের মতো কাজ করে।
চোখের প্রসাধনী : চোখের জন্য জনপ্রিয় প্রসাধনী কাজল ও সুরমা। কাজলে কার্বন থাকে। নানাভাবে ঘিতে কাপড় পুড়িয়ে কাজল তৈরি করা হয়। তা ছাড়া কাজল কিনতেও পাওয়া যায়। কাজল পরলে চোখ সুন্দর দেখায়, কিন্তু অনেকের কাজলে অ্যালার্জি থাকতে পারে কিংবা বেশি কাজল ব্যবহারে চোখে প্রদাহ হতে পারে।
সুরমায় লেড ও অ্যান্টিমনি থাকে। দীর্ঘ দিন সুরমা ব্যবহারেও চোখের সমস্যা, যেমন কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
তেল : মাথা ও শরীরে নানা রকম তেল ব্যবহার করা হয়। তবে নারকেল তেল ও সরিষার তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
নারকেল তেল মাথায়ই বেশি ব্যবহৃত হয় এবং এর সাথে নানা ভেষজ মেশানো যেতে পারে।
আমলকি, সিক্কাই, ভাংরা, অশ্বগন্ধা, ব্রাম্মী, বাউচি, বাবুল, কাপুর, দুঠি, হিনা বা মেহেদি, আরিথা, বহেরা, ক্যানথারাইদিন, কর্পূর, করচুরা, সতাওদ, চিনা, গুলঞ্চ, পিথরি, গোরখ আমলী ইত্যাদি।
চুল ঘন, কালো, মসৃণ করার জন্য এসব উপাদান তেলে মিশ্রিত করা হয়।
এ ছাড়া চুলপড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর জন্যও এসব কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এসব ভেষজ উপাদান মাথার ত্বক বা স্কাল্পে নানা ধরনের গোটা, প্রদাহ ইত্যাদির জন্য দায়ী হতে পারে। এ ছাড়া কপাল ও ঘাড়ের ত্বকের রং কালো করতে পারে। এসব তেল সতর্কতার সাথে ব্যবহার করবেন। যে উপাদান সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করছেন তা আপনার চুলে কোনো পরিবর্তন আনছে কি না, সে ব্যাপারে লক্ষ রাখবেন।
অন্যান্য উপাদান
কুমকুম, সিঁদুর ইত্যাদি দিয়ে কপালে টিপ দেওয়া হয়। এগুলো অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। আধুনিক টিপের পেছনে অবশ্য আঠা থাকে। তবে সেটাও ক্ষতিকর ও অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বককোষের রং বদলে দিতে পারে। যাকে আমরা লিউকোডার্মা বলি।
প্রাকৃতিক উপাদান যে সব সময় ভালো হবে, এমন কথা নেই। আর আগেই বলা হয়েছে, নানা রকম ক্রিম, সাবান, শ্যাম্পুতে প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত থাকে।