দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:
দুটি ‘চ্যালেঞ্জ’ সামনে নিয়েই জাতীয় নির্বাচনপূর্ব শেষ ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলোকে। চ্যালেঞ্জ দুটি হলো সেপ্টেম্বর থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং এর আগেই বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে হবে বিএনপিকে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদের স্বাভাবিক আনন্দ নেই বলে জানান অনেক নেতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা- সে বিষয়টিও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ফলে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঈদের সময় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় ‘শোডাউন’ করার যে রেওয়াজ আছে, এবার তেমনটি নাও দেখা যেতে পারে। আবার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা থেকে কেউ কেউ ঈদ উদযাপন করতে এলাকায় যাবেন। দলের বিভিন্ন স্তরের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির মধ্যে এ বিষয়ে কোনো ‘বার্তা’ নেই। যদিও প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে দলের হাইকমান্ড কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা গুলশানে দলীয় প্রধানের কার্যালয়— কোনোটিই সরগরম নয়। প্রার্থী হওয়ার জন্য নেতাদের আনাগোনাও কম। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ এলাকায় গেলেও সার্বিকভাবে নির্বাচন সামনে রেখে দলটিতে উচ্ছ্বাস কম। এছাড়া মামলা-হামলার ভয়েও অনেকে এলাকায় যাচ্ছে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বাভাবিক ঈদের আনন্দ নেই। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা যে কোথাও জমায়েত হয়ে একসঙ্গে ঈদের আনন্দ করবে সেই সুযোগও সরকার রাখেনি। মওদুদ সাহেবের মতো নেতাকে সরকার অবরুদ্ধ করে রেখেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসবের পরও ঈদের মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় সুযোগ পেলে সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা জনগণকে জানাবে। জাতীয় ঐক্যের বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় আছে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কয়েক বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের খুশির ঈদ হচ্ছে না। কারণ দেশে কোনো সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। মামলা-হামলায় সরকার তাদের তটস্থ করে রাখছে। তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থীরা কিভাবে এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালাবেন! মওদুদ সাহেবের মতো প্রবীণ নেতারাই ঘর থেকে বের হতে পারেন না।’ তিনি আরো বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য— এ দুটি বিষয় নিয়েই বিএনপি অগ্রসর হচ্ছে।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু জানান, শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে এবার ঈদে তিনি এলাকায় না গিয়ে ঢাকায় থাকছেন। তিনি জানান, ‘গত ঈদের সময় এলাকায় গিয়ে না খেয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছি। কারণ সরকার রাতে পুলিশ পাঠিয়েছে।’ দুুলু বলেন, ‘যদি ভোটের সুযোগ হয়, ভোট করি, একবারেই এলাকায় যাব। এখন গিয়ে ধরা খেয়ে লাভ কী!’
অবশ্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও তিনি ঈদে নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। নরসিংদী-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য এই প্রার্থী বলেন, ‘এ বছর নির্বাচন সামনে রয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু দলের হাইকমান্ড এখনো নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর পরও প্রতিবছরের অভ্যাস, তাই যাওয়া।’
দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে ওই নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। ফলে পৃথক কোনো প্রস্তুতি বা শোডাউনেরও প্রয়োজন দেখছি না। তাছাড়া নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না পুলিশের ভয়ে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি অবশ্য লক্ষ্মীপুরে ঈদ করতে যাবেন। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী এ্যানি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি দেশের বাড়িতে ঈদ করি। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই ঈদ পালনের সঙ্গে নির্বাচনের একটা সংযোগও রয়েছে। ঈদের পরের দিন থেকে এ জন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা- সাক্ষাৎ করব।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। এবারও ঈদে তাকে সেখানেই থাকতে হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রতিবছর ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কূটনীতিকসহ দলীয় নেতাকর্মী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তিনি জেলে থাকায় এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো উদ্যাগ নেয়া হয়নি। তবে নেত্রীর অনুপস্থিতিতে গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ঈদের নামাজের পর পরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন দলের সিনিয়র নেতারা। শায়রুল কবির আরো জানান, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার ঈদ উদযাপন করবেন নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে। তবে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি পাওয়া গেলে তিনি ঢাকায়ই থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাক্ষাতের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। তাদের কেউ কেউ ঈদের নামাজ ও জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নিজ এলাকায় যেতে পারেন। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে, তরিকুল ইসলাম নিজ এলাকা যশোরে ঈদ উদযাপন করবেন। দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঈদের দিন সকালে নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জের সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে ঢাকায় ফিরবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, বেগম সেলিমা রহমান, শওকত মাহমুদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকায় থাকবেন। আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালীতে, এম মোর্শেদ খান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন চট্টগ্রামে, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বরিশালে, শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গায় ঈদ উদযাপন করবেন। অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান ঢাকায় ঈদ জামাতে অংশ নিয়ে পরে টাঙ্গাইলে যাবেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী থাকবেন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল ঢাকায় এবং মজিবুর রহমান সরোয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে ঈদ উদ্যাপন করবেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহে এবং শামা ওবায়েদ ফরিদপুরে ঈদ উদযাপন করবেন।
রিজভী জানান, ঈদের নামাজ শেষে সকাল সাড়ে ১১টায় দলের সিনিয়র নেতারা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ঈদের দিন কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার কোনো কর্মসূচি আছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করব। অনুমতি পেলে অবশ্যই সিনিয়র নেতারা দেখা করবেন।’
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ঢাকায় ঈদের নামাজ শেষে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে যাবেন। খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক পাবনায় ঈদের নামাজে অংশ নেবেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ রকিব সিলেটে ঈদ উদযাপন করবেন। বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ঢাকায় থাকবেন। তবে ঈদের এক দিন পর নিজ নির্বাচনী এলাকা নীলফামারীর ডোমার-ডিমলায় যাবেন। জাগপা সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান ঈদে ঢাকায় থাকবেন। বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকায় ঈদ করবেন।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.