প্রতিকী ছবি
কলাপাড়া প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বেতমোড় গ্রামের সবজিচাষী মাসুদ মৃধা পাঁচ কন্যা নিয়ে সুখে সংসার করছিলেন। কিন্তু কয়েকজন বখাটের কারনে তাঁর পরিবার আতঙ্ক ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় কাটাচ্ছে। এ ব্যাপারে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ইতিমধ্যে তার দুই কণ্যার বিয়ে হয়ে গিয়েচে। অবিবাহিত তিন কন্যার মধ্যে বড় অথাৎ তৃতীয় কন্যা মহিমা স্কুলে যাওয়ার পথে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যৌন হয়রাণি, কুপ্রস্তাব ও মুখ চেপে ধরে জোর করে অপহরনকালে বাধা দেয়ায় মাসুদ মৃধাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছিল।
এ বছরের ১৪ জুন দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে মহিমাকে অপহরনের চেষ্টা চালায় একদল বখাটে। প্রকাশ্যে স্কুল ছাত্রীকে টানাহেচড়া ও শ্লীলতাহানির চেষ্টার সময় তার ডাকচিৎকারে তার বাবা মাসুদ মৃধাসহ স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। এ সময় বখাটেরা মাসুদ মৃধাকে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় ২৫ জুন পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে মাসুদ মৃধা।
মামলা করার পরে তিন বখাটে রহিম মাতুব্বর, জামাল মাতুব্বর ও নয়ন ফকির বর্তমানে হাজতবাসে। তারপরও নিস্তার নেই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোরী মহিমার। এখন ওই বখাটে চক্রের স্বজনেরা বিভিন্ন মামলা-হামলায় জড়ানোসহ প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। প্রতিদিন কিশোরী মহিমাকে স্কুলে পৌছে দেয়ার জন্য মা খাদিজা বেগম কিংবা বাবা মাসুদ মৃধা সঙ্গে যাচ্ছেন।
গ্রামছাড়া করার হুমকি দেয়া হয়েছে। এমনকি এসিডে ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। তিন বখাটে আদালতের নির্দেশে হাজতে থাকলেও তাকে জামাল, রহিম ও নয়নের দুই চাচিসহ স্বজনেরা হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। এমনকি মোবাইলে শিক্ষার্থী মহিমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। গ্রামের ১০৬ জন মানুষ এদের সহায়তার জন্য লিখিত আবেদনের স্বপক্ষে তাদের মোবাইল নম্বরসহ সই করেছেন। বর্তমানে মেয়ের লেখাপড়ার শঙ্কার চেয়েও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম শঙ্কায় পড়েছেন সবজি চাষী মাসুদ মৃধা। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে তার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। দিলে সকল ধরনের প্রটেকশন দেয়া হবে। মাসুদ মৃধা জানান, মামলা করেছি। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এখন আর কী করব বুঝতে পারছিনা। জীবন-জীবিকা সামলাবেন, না মেয়ের লেখাপড়াসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। বর্তমানে এই কৃষক পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন
স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও এ ছাত্রীর অভিভাবকরা নিরাপত্তার দাবিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু তারা কোন উদ্যোগ না নেয়ায় এ ছাত্রীর লেখাপড়া এখন বন্ধের পথে।
মহিমাসহ অপর দুই মেয়ে নিয়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। ঘটনার আগেও প্রায়ই স্কুলে আসা যাওয়ার পথে আসামীরা মহিমাকে কুপ্রস্তাব দিতো বলে জানান। তিনি বলেন, এ অনৈনিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় তার উপরও হামলা হয়েছে। মহিমার শিক্ষা জীবন রক্ষায় বিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি কোন উদ্যোগ নেয় নি।
মহিমা জানায়, স্কুলে যেতে ভয় করে। রাস্তায় হাটলেই বখাটেরা বাজে কথা বলে। তুলে নিতে চায়। এজন্য এখন বাবাও মা স্কুলে নিয়ে গেলে যাই, নয়তো ঘরেই থাকি। সেদিন (১৪ জুন) তার উপর যে হামলা হয়েছে সেই আতংক এখনও কাটেনি তার।
দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেধাবী স্কুল ছাত্রীর স্কুল আসা যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের অব্য্হাত হুমকিতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে বেতমোর গ্রামের অভিভাবকরা। গ্রামের ১০৬ অভিভাবক এ সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবিতে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
বেতমোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতালেব সিকদার জানান, তারা মহিমার পিতার অভিযোগ পত্র পেয়েছেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সভা করতে না পারায় এ অভিযোগটি উপস্থাপন করতে পারেন নি।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, স্কুল ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে ছাত্রীর নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।