দর্পণ ডেস্ক : অবশেষে বুধবার সুইডেনের এক প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, তারা পালমের হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। ওই ব্যক্তির নাম স্টিগ ইংস্টর্ম। তিনি ২০ বছর আগে ২০০০ সালে মারা গেছেন। জীবদ্দশায় তিনি একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। এর মাধ্যমে কয়েক দশক পর বন্ধ হয়েছে পালমে হত্যা মামলা।
১৯৮৬ সালে আততায়ীর হাতে খুন হয়েছিলেন সুইডেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওলফ পালমে। এরপর কেটে গেছে ৩৪ বছর। এতদিন পর্যন্ত তার খুনীকে শনাক্ত করা যায়নি।
খবরে বলা হয়, মৃত্যুর আগে কয়েক দশক ধরে সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। টানা দুই মেয়াদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। স্ক্যান্ডিনাভিয়া অঞ্চলের ধনশালী অবস্থার পেছনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৮৬ সালে রাজধানী স্টকহোমের কেন্দ্রে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। সেদিন নিজের স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সিনেমা দেখে ফিরছিলেন পালমে। তবে তার মৃত্যুর পর কয়েক দশক পার হয়ে গেলেও খুনীকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে সুইডেনজুড়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সৃষ্টি হয়। বুধবার কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না, এমন একজন মৃত ব্যক্তিকে পালমের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ অভিযোগ সন্তুষ্টজনক হবে না। জনগণের মধ্যে পালমের হত্যা নিয়ে গুঞ্জন জারি থাকবে।
২০১৭ সাল থেকে পালমে হত্যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুইডিশ প্রসিকিউটর ক্রিস্টার পিটারসন। বুধবার তিনি বলেন, পালমেকে হত্যা করেছিলেন স্টিগ ইংস্টর্ম। তিনি পালমে হত্যাকাণ্ডে বহুদিন ধরেই একজন সন্দেহভাজন ছিলেন। সুইডেনজুড়ে ‘স্ক্যান্ডিয়া ম্যান’ নামে পরিচিত ছিলেন। পালমেকে যেখানে খুন করা হয় ইংস্টর্ম সে জায়গার নিকটস্থ একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
জীবদ্দশায় ইংস্টর্মকে বহুবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনি পালমের হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। তবে পুলিশ তাকে গুরুতর সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করেনি। ২০০০ সালে ইংস্টর্মের মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয়, তিনি আত্মহত্যা করে মারা যান।
২০১৮ সালে স্থানীয় এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকের একটি বইয়ে পালমে হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন কিছু তথ্য সামনে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে, একটি তথ্য হচ্ছে, ইংস্টর্ম ঘটনার দিন নির্দিষ্ট সময়ের আগে অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার অফিসের ‘টাইম স্ট্যাম্প’ উদ্ধৃত করে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। এমনকি পুলিশকে দেয়া তার জবানবন্দিতে দেয়া সময়ের সঙ্গেও ওই টাইম স্ট্যাম্পে থাকা সময়ের মিল নেই।
পিটারসন বলেন, ইংস্টর্ম মৃত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা সম্ভব নয়। তাই, তদন্তটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে, কেবল ইংস্টর্মকে দোষী চিহ্নিত করা ব্যতিত তদন্তে অন্যকোনো প্রমাণ বা সাফল্যের কথা উল্লেখ করেননি পিটারসন। তিনি জানান, তারা যে প্রমাণ পেয়েছেন তাতে ইংস্টর্মকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে, কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হতো না। তিনি আরো বলেন, কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, হত্যাকারী দেখতে ইংস্টর্মের মতোই ছিলেন। অনেকের বক্তব্যের সঙ্গে ইংস্টর্মের দেয়া বক্তব্যের অমিল পাওয়া গেছে।
এদিকে, ইংস্টর্মের পরিবার প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ডেইলি এক্সপ্রেসেনে ইংস্টর্মের বাল্যকালের বন্ধু অলে ম্যাডব্রিংক বলেন, ইংস্টর্ম ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে সাধারণ মানুষ। আমি এছাড়া অন্যকিছু বিশ্বাস করি না।
পালমের ছেলে মারটেন জানান, তার বিশ্বাস ইংস্টর্মই তার বাবার হত্যাকারী। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো নিষ্পত্তিকারী প্রমাণ নেই।
পালমে তার জীবদ্দশায় আধুনিক সুইডেনের স্থপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার শীতল যুদ্ধের তীব্র সমালোচক ছিলেন তিনি। বহু বছর ধরে তার হত্যা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, সিআইএ বা কুর্দিশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বা দক্ষিণ আফ্রিকান নিরাপত্তা বাহিনী পালমেকে হত্যা করেছে।