অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার একটি ক্যাথলিক চার্চ ২১ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। চার্চের যাজকদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া শ’ শ’ ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দিতে এই তহবিল গঠন করা হবে। চার্চের আর্চবিশপ বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রোম্যান ক্যাথলিক চার্চে নির্যাতনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি এটি। বছরের পর বছর ধরে আইনি লড়াই ও কঠোর দর কষাকষির পর এই সিদ্ধান্তে এসেছে চার্চ। সার্বিকভাবে চার্চ সম্পৃক্ত যৌন নির্যাতনের ঘটনায় এটি হবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক।

যাজকদের যৌন নির্যাতন সংশ্লিষ্ট মামলার হিসাব রাখে এমন একটি ওয়েবসাইট হলো বিশপঅ্যাকাউন্টিবিলিটি.অর্গ। সংস্থাটির উপ-পরিচালক টেরি ম্যাককিয়েরন্যান বলেন, ২০০৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের একটি চার্চ তাদের যাজকদের হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়া ৫০৮ জন ভুক্তভোগীকে ৬৬ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। সেটিই ছিল যাজকদের যৌন নির্যাতনের ভুক্তভোগীদেরকে দেওয়া কোনো চার্চের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের অর্থ।
ম্যাককিয়েরন্যান মিনেসোটার এই চার্চের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা গড়ে মোটামুটি ভালো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিতে একজন বিচারক ও ৪৫০ জন ভুক্তভোগীর অনুমোদন লাগবে। তাদের আইনজীবী জেফ অ্যান্ডারসন বলেন, তার প্রত্যাশা বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই ক্ষতিপূরণ গ্রহনের পক্ষে রায় দেবেন।
তিনি বলেন, মিনেসোটার এই মামলার পরিণতি যাজকদের যৌন নির্যাতনের অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় হতে পারে, কেননা আদালত চার্চকে অনেক বেশি স্বচ্ছ হতে বাধ্য করেছেন। নির্যাতনের অন্যতম ভুক্তভোগী জিম কিনান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, অন্য ভুক্তভোগীদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। তাদেরও উচিত সামনে এসে সব প্রকাশ করা। তাদের উদ্দেশ্যে কিনান বলেন, ‘আপনার সত্যটা মুখ ফুটে বলুন। কারণ আপনিই পরিবর্তন আনতে পারবেন। দুনিয়াকে পরিবর্তন করতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা পৃথিবীকে আরেকটি নিরাপদ করতে সক্ষম হয়েছি।’
এদিকে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে চার্চের আর্চবিশপ বার্নার্ড হেবদা বলেন, এই ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে বাড়তি খরচ ও আইনি জটিলতা এড়ানো যাচ্ছে। এর মাধ্যমে যিশু খ্রিষ্টের নীতিবাক্য ছড়িয়ে দেওয়ার মিশন চালিয়ে যেতে পারবে চার্চ।
যেসব ভুক্তভোগী নিজেদের নির্মমতার গল্প প্রকাশ করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে, এই নির্যাতন আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আপনাদের শৈশব, আপনাদের নিষ্কলুষতা, নিরাপত্তা, মানুষকে বিশ্বাস করার সামর্থ্য, এবং অনেক ক্ষেত্রে আপনার বিশ্বাসও হারিয়ে গেছে এ কারণে। চার্চ আপনাদেরকে হতাশ করেছে। আমি খুবই দুঃখিত।’
মিনেসোটার এই আর্চডিওচিজ অব সেন্ট পল অ্যান্ড মিনিয়াপলিস নামে চার্চটি হলো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক ডজনেরও বেশি রোম্যান ক্যাথলিক চার্চের মধ্যে একটি, যাদের যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হওয়ায় নিজেদেরকে দেওলিয়া ঘোষণা করেছে। সেন্ট পল চার্চ ২০১৫ সালে দেওলিয়াত্বের জন্য আবেদন করে। এর দুই বছর আগে মিনেসোটার আইনসভায় পাস হয় চাইল্ড ভিকটিমস অ্যাক্ট। এই আইনে কোনো চার্চের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকারীর সংখ্যা সীমিত করার বিধান প্রত্যাহার করা হয়। ফলে শ’ শ’ ভুক্তভোগী চার্চের বিরুদ্ধে মামলা করতে সমর্থ হন।
যাজকদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ভুলভাবে সামাল দেওয়ার কারণে মিনেসোটার এই চার্চ অনেকদিন ধরেই নজরদারিতে ছিল। চার্চের পূর্বতন আর্চবিশপ জন সি নিয়েনস্টেড ও অক্সিলারি বিশপ লি অ্যা পিচে ২০১৫ সালে পদত্যাগ করেন। এক যাজকের অসংখ্যা নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে চার্চের বিরুদ্ধে স্থানীয় একজন সরকারী কৌঁসুলি মামলা ঠুকে দেওয়ার পর তারা পদত্যাগ করেন।
তবে চার্চের যাজকদের এই যৌন নির্যাতনের কাহিনী প্রথম প্রকাশ করেন চার্চেরই একজন চ্যান্সেলর। তিনি বলেন, সাবেক আর্চবিশপ নিয়েনস্টেড নির্যাতনকারী যাজকদের অপকর্ম ধামাচাপা দিয়েছেন। এমনকি বছরের পর বছর তাদেরকে ধর্মসভায় বহাল রেখেছেন।