ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার শিক্ষার ছোঁয়ায় প্রথমবারের মতো ঘরের বাইরে পা রাখে ‘অবরোধবাসীনি’ বাঙালি নারী। সময়ের কাল খেঁয়ায় শিক্ষিত নারী যোগ্যতার মাপকাঠিতে পুরুষের পাশে নাম লেখায় উপার্জনে। ঘরে-বাইরে শুরু হয় তার দীপ্ত বিচরণ। কিন্তু পুরুষের লোলুপ চাহনী, হেয় করার হীনমন্যতা, লিঙ্গ বৈষম্যের যুক্তিহীন প্রলাপ নারী বিচরণকে আজো করতে পারেনি অবাধ, নির্ভিক।

রাস্তাঘাট, কর্মক্ষেত্র এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গাগুলোতে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, যৌতুক প্রথা এগুলো সংবাদ মাধ্যমে নিত্য পাওয়া কিছু স্বাভাবিক ঘটনা।

১৯০৯ সালেরফেব্রুয়ারির শেষ রবিবার প্রথমবারের মতো পালিত হয় জাতীয় নারী দিবস। যার নেপথ্যে ছিল আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টি।

১৯১০ সালে ১৭টি দেশের শতাধিক নারী একটি দিনকে নারী দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানায়। এর এক বছর পরই অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলো নারী অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং বিশ্বব্যাপী নারী দিবস পালনের আহ্বান জানায়।

নারী দিবসের রঙ হিসেবে বেছে নেয়া হয় বেগুনী’কে। বেগুনী রঙ নারীর সততা এবং মর্যাদার পরিচায়ক। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বেগুনী রঙের পোশাক পরিধান করে নারী দিবস পালন করেন নারীরা।

এই দিবস কে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালিত হয়। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিসে নারীদের জন্য ছোট-খাটো উপহারে সম্মান জানানো হয়।

তবে দিবসটি কি শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? প্রকৃতপক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানে কি নারীরা যথাযথ নিরাপত্তা বা সুযোগ-সুবিধা এবং প্রাপ্য অধিকারগুলো ভোগ করছে, যার জন্য এই নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল?

নারী উদ্যোক্তা এমরাজিনা টেকনোলজিস-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পাইওনিয়ারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এমরাজিনা আই খান এর মতে, ‘কর্মক্ষেত্রে নারী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতার চেয়ে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাটা অনেক বড় ব্যাপার। অপরদিকে পরিবারের ক্ষেত্রে ‘মূল পরিবর্তনটা পরিবার থেকেই আসা উচিত।

এমরাজিনা আই খান

কারণ পরিবার যদি বদলে যায় তাহলে সমাজ বদলে যাবে। আর একটি দেশের পরিবর্তন আনতে সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। পুরো ব্যাপারগুলো যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত হলে একজন নারী নিজের, পরিবারের এবং পক্ষান্তরে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।’

অনলাইন ফ্যাশন হাউজ গুটিপোকা ও ব্যাড হ্যাবিটের প্রতিষ্ঠাতা এবং ডিজাইনার আফসানা সুমী বলেন, ‘নারী দিবস’ নিয়ে এক প্রকার পণ্যায়ণ হয় এখন। নারী দিবসের পেছনে রয়েছে সমমর্যাদা, সম অধীকার পাওয়ার সংগ্রাম। একটি বিশেষ দিনে অধিক সম্মান দিয়ে পরদিন আবার তাকে ফেরত পাঠানো হয় আগের অবস্থানে। কর্পোরেট অফিস থেকে শুরু করে বহু প্রতিষ্ঠানেই একদিনের জন্য নারীকে প্রমোশন দেয়া, পরিচালক ঘোষণা করা ইত্যাদি চলতে থাকে। বাকি সমস্ত দিন কিন্তু জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন চলছে!

আফসানা সুমী

এই অসম্মানের কি মানে? না, নারী হিসেবে আলাদা কিছু, অধিক কিছু কোনো নারীই চান না। যা তার প্রাপ্য তাই তাকে দেওয়া হোক, তার দক্ষতা দিয়ে বেতন, সুবিধা ইত্যাদির বিচার হোক এটাই একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নারীর প্রত্যাশা। নারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেকে ভালোবাসা স্বার্থপরতা নয়। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের যত্ন নিন। অসম্মানজনক যে কোনো কিছুকে দৃঢ়তার সাথে না বলুন।

তবে অন্য অনেক দিবসের মতো এ দিনটিও দুভাগে বিভক্ত। উচ্চ আর নিম্ন আয়ে। দিন মজুর, নিম্নবিত্ত নারীদের মাঝে নেই নারী দিবসের কোন তাৎপর্য। পরিশ্রমী এই নারীদের মাঝে নেই এই দিবস পালনের ফুরসত। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ক্লান্তিভরা চোখের ঘুমই যেন তাদের সব।

নারীদের সার্বিক পরিচালনার বিষয়গুলো হাঁ-ধর্মী হলেও আনাচে-কানাচে বা প্রকাশ্যেও দেখা মিলে না-ধর্মী অনৈতিক আচরণগুলোর।

প্রশ্ন উঠবেই এই কর্পোরেট লোক দেখানো নারী দিবস কি তার যথাযথ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হচ্ছে? দেখা কি মিলছে দৃষ্টিভঙ্গি বা আচরনের কোন আমূল পরিবর্তনের? সবমিলে বিবেকে বিদ্ধ এ কেমন ‘নারী দিবস’!

নারী দিবস উপলক্ষে ডেইলি বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে সব নারীকে জানাই শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা সব নারীদের জন্য। ‘প্রজন্ম হোক সমতার, নিশ্চিত হোক নারী অধিকার’।