অনলাইন ডেস্ক : নিত্যদিনের অসহনীয় যানজটের প্রভাব পড়েছে তৈরি পোশাকের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত পুরান ঢাকার ইসলামপুরে। অন্যান্য বছর ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো ইসলামপুর। অথচ এবছর গোটা এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসছে স্থবিরতা। ফলে হতাশায় ভুগছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রধান সড়ক এমনকি অলিগলি অচল হয়ে থাকে যানজটে। ফলে মালামাল আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাই বাজার খুঁজছেন অন্যত্র। এখানকার ব্যবসা- বাণিজ্যে ধস নামার জন্য এটা বড় কারণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, রমজানের দশম দিন শাপলা বস্ত্রবিতান, সূর্যমুখী বস্ত্রালয়, বিসমিল্লাহ ক্লথ, হাই চয়েজ, হোল সেল বিডি, লাভলি শাড়ি বিতানসহ প্রসিদ্ধ দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় তেমন নেই বললেই চলে। বেচা বিক্রি না থাকার কারণে অনেক দোকান খোলাও হয়নি। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মধ্যে দেখা দিয়েছে অনীহা। ব্যবসায় স্থবরিতা নেমে আসায় অনেক ব্যবসায়ী নিজের চালান হারিয়ে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

পাকিজা হোম কালেকশনের ম্যানেজার শ্যামল চন্দ্র জানান, গেল কয়েক বছর ধরে ইসলামপুরের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিস্থিতি খারাপ। প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করলেন যানজটকে। তিনি বলেন, এখন আর পাইকারি ক্রেতা ভয়াবহ যানজট ঠেলে ইসলামপুর কাপড় কিনতে আসতে চান না। পরিবর্তে তারা সরাসরি চীন অথবা ভারত থেকে চাহিদা মাফিক কাপড় আমদানি করে। একসময় যারা কাপড় কিনতো ইসলামপুর থেকে তারা এখন আর এদিকে আসতে চায় না। পাইকারি ক্রেতা কমে যাওয়ায় এখানকার বনেদি ব্যবসায়ী পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে ইসলামপুরের একশ্রেণির দোকানির বিরুদ্ধে কাপড়ের বাড়তি দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। কারো কারো মতে, অতিলোভী দোকানিদের বাড়তি মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতার কারণেই ইসলামপুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ঈদ বাজারের জন্য পোশাক কিনতে আসা এক পাইকারি ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে যে পোশাক কিনে নিয়ে গেছি এখন সেই একই পোশাক ২০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে এখানকার দোকানিরা দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর পুরান ঢাকায় আসাও অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যানজটের কারণে সারাদিন চলে যায়। তবে এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর অন্যান্য বিপণি বিতানের তুলনায় এখানকার পণ্যের দাম কম। অবশ্য ক্রেতা কম থাকায় আগের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়তি রাখা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তারা।

ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য জানান, ইসলামপুরের কাপড়ের বাজারের দেশ-বিদেশে পরিচিতি রয়েছে। তিনি জানান, ট্যাক্স বেড়ে যাবার কারণে ব্যবসায়ীরা আগের মতো লাভ করতে পারে না। কিন্তু তুলনামূলকভাবে তাদের খরচ বেড়ে গেছে অনেক। তাই অল্প বিক্রি থেকে সহজেই অধিক লাভ করতে চায় কেউ কেউ। ফলে ইসলামপুরের বনেদিভাব হারাতে বসেছে।

অরবিট কালেকশন এর ম্যনেজার আব্দুল মালেক জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় বিশাল বাজার শুরু হয়। শবেবরাতের পর পুরোদমে জমে ওঠে এই বাজার। ক্রেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে ৩ থেকে ৪ বার মালের জন্য আসলেও এবার ১ বারের বেশি আসেননি। তাদের খুচরা দোকানগুলোতেও বিক্রি কম। তাই তারা নতুন মালের জন্য কোনো অর্ডার দিচ্ছেন না।