অনলাইন ডেস্ক :মুক্তামনির কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে? সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনি এখন ভালো নেই। আগের তুলনায় তার ডান হাতটি ফুলে গেছে। রোগটির বিস্তার এখন শুধু ডান হাতেই সীমাবদ্ধ নেই। বুক, পেট ও পায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। লিমফেটিক ম্যালফরমেশন বা রসবাহী নালীর বিকলাঙ্গতা রোগে আক্রান্ত মুক্তামনির শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এর পর গত বছর জুলাইয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার চিকিৎসা শুরু হয়। ডান হাতে কয়েক দফা অস্ত্রোপচারও করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে তাকে এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পর আর হাসপাতালে আনা হয়নি তাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন সমকালকে বলেন, মুক্তামনির বাবার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মুক্তার দুটি ছবিও তিনি পাঠিয়েছেন। ওই ছবি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঈদের পর তাকে বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হবে। সে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সারাদিন বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে মুক্তামনির। মাঝে মাঝে হুইল চেয়ারে করে দাদার কবরের পাশে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এলাকার অন্য ছেলেমেয়েরা ভয়ে তার কাছে যেতে চায় না।

মুক্তামনির বাবা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন জানান, ব্যান্ডেজ খুলে ডান হাত পরিস্কার করতে গেলে যন্ত্রণায় ছটফট করে মুক্তামনি। মাঝে মাঝে হাত থেকে পোকাও বেড়িয়ে আসছে। ড্রেসিং করতে বিলম্ব হলে ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়ায়। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী তার সব ওষুধও বন্ধ আছে।
মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ইব্রাহিম হোসেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।

ইব্রাহিম বলেন, বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা এখনও মুক্তমনির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। প্রয়োজন হলে তাদের ফোন করে পরামর্শ নিচ্ছি। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কিন্তু বর্তমানে তার হাতটি অস্ত্রোপচার করার মতো অবস্থায় নেই। আমরা অনেকটাই আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখছি।

হাতের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুক্তামনি কোনো কথা বলেনি। শুধু হাতের দিকে ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। আর চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

গত বছরের জুলাইয়ে গণমাধ্যমে মুক্তামনিকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পর স্বাস্থ্য বিভাগের টনক নড়ে। প্রথমে স্বাস্থ্য সচিব এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ১১ জুলাই তাকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, মুক্তামনি লিমফেটিক ম্যালফরমেশন বা রসবাহী নালীর বিকলাঙ্গতা রোগে আক্রান্ত। পরে কয়েক দফা তার হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর তাকে এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পর মুক্তামনি আর হাসপাতালে ফেরেনি।