হিন্দু ধর্মাবালম্বীদের শতবর্ষী শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টা করায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হককে ভৎসনা করেছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি আগামি ২৬ মে’র মধ্যে তাকে শ্মশানে ব্যানার টাঙিয়ে জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেন।
এ সময় অভিযুক্ত অওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৩ মে শ্মশান দখলের অভিযোগের বিষয়ে তাকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার তিনি আদালতে হাজির হন।
আদালত আজিজুল হককে ভৎসনা করে আদেশে বলেন, স্থানীয় জনগনের কাছে শ্মশানে ব্যানার টাঙিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যানারে লিখতে হবে, ‘শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টা করে আমি ভুল করেছি। এ ধরনের কাজ আর কোনো দিন করব না।’
আদেশে আরও বলা হয়, ব্যানার টাঙিয়ে ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানে ওই শতবর্ষী শ্মশানের কমিটিকে উপস্থিত রাখতে হবে। পরে ওই ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানের ছবি আগামী রোববারের (২৭ মে) মধ্যে হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে হবে। নয়তো আজিজুল হকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে। এ বিষয়টি ২৭ মে ফের আদালতের কার্যতালিকায় আসবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে।
শ্মশান দখল করা নিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ জুন একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে।
ওই রিটে একই বছরের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেন। এ ছাড়া বিষয়টি তদন্ত করতেও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১৩ মে রুলের শুনানিতে হাইকোর্ট অভিযুক্ত আজিজুল হককে তলবের আদেশ দেন। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে আজিজুল হকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী লায়েকুজ্জামান মোল্লা।
শুনানিতে আজিজুলের আইনজীবী বলেন, ওই শ্মশানের জায়গা দখল করার চেষ্টা করেছিল প্রায় দুই বছর আগে। পরবর্তীতে ওই জায়গা স্থানীয় হিন্দুদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানো কোনো সমস্যা নেই। এটি একটি ভুল কাজ ছিল।
এ সময় আজিজুলের পক্ষে অভিযোগ অস্বীকার করা হলে, আদালত বলেন- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের তদন্তে ঘটনার সত্যতা উঠে এসেছে।
এক পর্যায়ে উপজেলা সভাপতি পদে আজিজুল হক এখনও কিভাবে বহাল আছেন, তা নিয়ে আদালত প্রশ্ন তোলেন। আজিজুলকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে ভৎসনাও করেন আদালত। ‘তার ভয়ে স্থানীয় হিন্দুরা দেশ ছাড়বেন’ বলে সংবাপত্রে যে খবর প্রকাশ হয়েছে সেটিও তুলে ধরেন আদালত। সাম্প্রদায়িক লোক আওয়ামী লীগের এরকম পদে থাকা উচিত নয় বলেও আদালত মন্তব্য করেন।