অনলাইন ডেস্ক : হ্যারি-মেগানের রাজকীয় বিয়েতে মাতল ব্রিটেন।
রাজ পরিবারের বিয়েতে ৬০০ বিশেষ অতিথি মধ্যাহ্নভোজ সারলেন। আর সেই বিবাহবাসরের মেনুতে ছিল তিন ধরনের খাবার। শুরুতে সেভরি ক্যানাপিতে ছিল স্কটিশ ল্যাঙ্গোস্টাইন র‌্যাপড ইন স্মোকড স্যালমন উইথ সাইট্রাস ক্রিম ফ্রেইচ, গ্রিলড ইংলিশ অ্যাসপ্যারাগাস র‌্যাপড ইন কামব্রিয়ান হ্যাম, গার্ডেন পি পান্না কোট্টা উইথ কোয়েল এগস অ্যান্ড লেমন ভার্বানা, হেরিটেজ টোমাটো অ্যান্ড বাসিল তারতারে উইথ বালসেমিক পার্লস, পোচড ফ্রি রেঞ্জড চিকেন বাউন্ড ইন এ লাইটলি স্পাইসড ইয়োগার্ট উইথ রোস্টেড অ্যাপ্রিকট, ক্রোকেট অফ কনফিট উইন্ডসোর ল্যাম্ব, রোস্টেড ভেজিটেবলস অ্যান্ড শ্যালট জ্যাম, ওয়ার্ম অ্যাসপারাগাস স্পিয়ারস উইথ মোজারেলা অ্যান্ড সান-ব্লাশ টোমাটোজ। অতিথিদের জন্য আরও বেশ কয়েক ধরনের খাবার রয়েছে। রয়েছে ফ্রিকাসি অব ফ্রি রেঞ্জ চিকেন উইথ মোরেল মাশরুম অ্যান্ড ইয়ং লিকস, পি অ্যান্ড মিন্ট রিসোটো ইউথ পি শুটস, ট্রাফল অয়েল অ্যান্ড পারমেশান ক্রিস্পস, টেন আওয়ার স্লো রোস্টেড উইন্ডসোর পর্ক বেলি ইউথ অ্যাপেল কম্পোট অ্যান্ড ক্র্যাকলিং। সবশেষে সুইট ক্যানাপিতে রয়েছে শ্যাম্পেন অ্যান্ড পিস্টাচিও ম্যাকারুন, অরেঞ্জ ক্রিম ব্রুলি টার্টলেটস, মিনিয়েচার রুবার্ব ক্রাম্বল টার্টলেটস। আর একদম শেষে সবথেকে আকর্ষণীয় কেক।

রাজ পরিবারের এই বিয়ের খাবার টেবিলের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ এই কেক। এল্ডারফ্লাওয়ার সুইস মেরিঙ্গের বানানো সুস্বাদু এই কেকের স্বাদে রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। গোটা কেকটি সাদা বাটারক্রিমে মোড়া। কেকের উপাদানে রয়েছে ২০০ আমালফি লেমন, ১০ বোতল সান্দ্রিঘাম এল্ডারফ্লাওয়ার, ২০ কেজি মাখন, ২০ কেজি চিনি এবং ৫০০টি অর্গানিক এগ। গত পাঁচ দিন ধরে সাতজন বেকার মিলে বাকিংহাম প্রাসাদের রান্নাঘরে এই কেকটি বানিয়েছেন।

যেভাবে বিয়ে
গাড়ি থেকে নেমে বাবার হাত ধরে বহু স্বামীর কাছে যাওয়াটাই রীতি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেয়ের বিয়েতে থাকতে পারেননি টমাস মার্কেল। সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেগানের হবু শ্বশুর প্রিন্স চার্লস। কিন্তু শ্বশুরকে গাড়ি অবধি আসতে দেননি রাজপরিবারের হবু বধূ। নারীসত্তার জয়গান গেয়ে নিজেই ক্যাসেলের দিকে হেঁটে যান তিনি। কিছুটা দূরে অপেক্ষমান শ্বশুরের কাছে। এরপর প্রিন্স চার্লসের হাত ধরে হবু বর প্রিন্স হ্যারির কাছে। সঙ্গে ১০ জন কচিকাঁচা। যার মধ্যে ছিল কেট ও উইলিয়ামের দুই সন্তান জর্জ এবং শার্লটও। চার্লস ছেলের হাতে বউমার হাত তুলে দিতেই অলটারে দাঁড়িয়ে অস্ফূটে মেগানের দিকে তাকিয়ে হ্যারির স্বগোক্তি, ‘দারুণ লাগছে তোমায়।’ রাজকীয় বিয়ের রোমান্টিক মেজাজটা বাঁধা হয়ে যায় এখানেই। সেন্ট জর্জস চ্যাপেলের ভিতর সামনাসামনি তো বটেই, উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠে আমন্ত্রিতরাও তখন বিশাল পর্দায় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব সাসেক্সের দিকে। আর ক্যাসেলের বাইরে অন্তত ১ লক্ষ মানুষ অপেক্ষমান।

পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নারীশক্তির দিকে নজর রেখেছিলেন মেগান। দায়িত্ব পড়েছিল ‘গিভেনচি’র প্রথম মহিলা প্রধান ক্লেয়ার ওয়েট কেলারের উপর। মেগান চেয়েছিলেন, বিয়ের গোটা সফরে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের সাহচর্য পেতে। সেইমতোই কাজ করেছেন ক্লেয়ার। পাঁচ মিটারের সাদা ‘ভেইল’ এবং ‘গাউন’-এ জুড়েছেন ৫৩টি দেশের জাতীয় ফুলের ত্রিমাত্রিক প্রতীক। যার মধ্যে ভারতের পদ্ম স্থান পেয়েছে রাজবধূর ‘ভেইল’-এ। জানা গিয়েছে, যে সব কর্মীরা এই ভেইল তৈরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন, প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর তাঁদের হাত ধুতে হয়েছে, যাতে সেলাই কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর মেগানের হাতে যে ফুলের তোড়া ছিল, ফিলিপিয়া ক্র্যাডক পুরোটাই তৈরি করেছেন রাজপরিবারের বাগানের ফুল দিয়ে। এর মধ্যে কিছু ফুল শুক্রবার কেনসিংটন প্যালেসে নিজের ব্যক্তিগত বাগান থেকে নিজে তুলে রেখেছিলেন প্রিন্স হ্যারি। এছাড়া ছিল, ডায়নার বিশেষ পছন্দের ‘ফরগেট-মি-নটস’ও।

এই বিয়ে প্রথা ভাঙার বিয়ে হিসেবেই হয়তো চিহ্নিত হয়ে থাকবে রাজপরিবারে। গতানুগতিক প্রথা ভেঙে বিবাহবিচ্ছিন্না মেগানকে বিয়ে করলেন হ্যারি। সঙ্গে এটাও উল্লেখ্য, মেগান কৃষ্ণাঙ্গ। তাই হ্যারি-মেগানের বিয়ে বর্ণবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে নজির। এমনকী ধর্মীয় রীতিকে উপেক্ষা করে রাজপরিবারের পুত্রবধূ হলেন এক ক্যাথলিক। পাশাপাশি এদিন রাজপরিবারের প্রথার বাইরে গিয়ে বিয়ের পর আংটি বদল করেন প্রিন্স হ্যারি। হ্যারির টেক্সচার ফিনিশড প্ল্যাটিনাম ব্যান্ড এবং মার্কেলের ওয়েলশ গোল্ড-এর টুকরোর আংটি—দু’টোই তৈরি করেছে ক্লিভ অ্যান্ড কোম্পানি। একে অপরের হাতে আংটি পরিয়ে দিয়েই একসঙ্গে জীবন শুরু করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার রীতি থাকলেও, তা এদিন ভাঙেন ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব সাসেক্সে। প্রথা ভেঙেছে শব্দোচ্চারণের ক্ষেত্রেও। ‘ফর বেটার, ফর ওরস, ফর রিচার, ফর পুওরার, ইন সিকনেস অ্যান্ড ইন হেলথ, টু লাভ অ্যান্ড চেরিশ, টিল ডেথ আস ডু পার্ট’ উচ্চারিত হলেও, হ্যারির প্রতি ‘টু ওবে’ বলতে রাজি হননি মেগান। একুশ শতকের অভিজাত যুগল শুধু বিয়ে সারলেন এমন নয়, তার সঙ্গে আধুনিক মনস্কতারও পরিচয় দিয়ে গেলেন। তাই ঐতিহ্য বজায় রাখার থেকে একসঙ্গে থাকার প্রতিই বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে চেয়েছেন দু’জন। তাদের এই মনোবাঞ্ছা আগে জানতে পেরে সেইমতোই তৈরি করা হয়েছিল বয়ান। অবশ্য ১৯৮১ সালে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিয়ের সময় প্রথমবার এই রাজপ্রথার বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন ডায়না। ২০১১ সালে শাশুড়ির পথেই হাঁটেন কেট মিডলটন। আর মেগানও একই পথে হাঁটলেন।

বিয়ে শেষে প্রথা অনুযায়ী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হ্যারি এবং মেগানকে ‘ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব সাসেক্স’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কারণ, রাজপরিবারের এই উপাধিই ফাঁকা পড়েছিল। রাজপরিবারের ইতিহাস বলছে, এর আগের ডিউক অব সাসেক্স দু’বার বিয়ে করলেও তার বাবা রাজা তৃতীয় জর্জ কোনোটাই মেনে নেননি। ফলে এই উপাধি কাউকে দেয়া সম্ভব হয়নি। যা আজ পূর্ণ হলো। মেগান-হ্যারির রাজকীয় বিয়েতে।