অনলাইন ডেস্ক : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে শাশুড়ি ও পুত্রবধূকে খুনের ঘটনার নেপথ্যে মূল কারণ লন্ডন প্রবাসীর সুন্দরী স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা। চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে শাশুড়িকে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশের পর সে পরিকল্পনা কাজে আসেনি তাদের। তখন শাশুড়িকে চাকু দিয়ে একাধিক আঘাত করে হত্যা করে খুনিরা। তার চিৎকারে পুত্রবধূ এগিয়ে এলে তাকেও উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলে তিনিও মারা যান।

বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের এমন লোমহর্ষক তথ্য দেয় গ্রেফতারকৃত মোঃ তালেব ও জাকারিয়া আহমেদ শুভ। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা জাহান।

বিকেল সাড়ে ৫টায় নিজ কার্যালয়ে গ্রেফতারকৃত আসামিদের দেয়া জবানবন্দি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। তিনি জানান, আসামিদের দেয়া তথ্যে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু, আসামিদের রক্তমাখা জামা কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ১১ মে তালেব, শুভ ও তাদের অপর এক বন্ধু লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরীর স্ত্রী রুমি বেগমকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী ঘটনার রাতে তালেব পূর্ব পরিচিতির সুবাদে ঘরে ঢুকতে চাইলে প্রবাসী আখলাক চৌধুরীর মা মালা বেগম গেইট খুলে দেন। এ সময় তার সাথে শুভকে দেখে তার পরিচয় জানতে চান। কিন্তু তালেব কোন উত্তর না দিয়ে চাকু দিয়ে মালা বেগমকে হত্যার ভয় দেখায়। তিনি চিৎকার শুরু করলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত শুরু করে। আঘাত পেয়েও তিনি দৌড়ে একটি কক্ষে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন।

এ সময় শাশুড়ির চিৎকার শুনে দৌড়ে তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে রুমি বেগমকে নিজের হাতে থাকা ছুরি দিয়ে শুভ আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই শাশুড়ি ও পুত্রবধূর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের দুইজনসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তালেব ও শুভ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসম শামছুর রহমান ভূঁইয়া, সহকারি পুলিশ সুপার পারভেজ আলম, সহকারি পুলিশ সুপার সদর মো. নাজিম উদ্দিন, ডিএসবির ডিআইও (১) মো. মাহবুব আলম, ওসি ডিবি মো. শাহ আলম প্রমূখ।

উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে গত ১৩ মে লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরীর মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে। এ
ঘটনায় রুমি বেগমের বড় ভাই ডা. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল­াপুর গ্রামে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে লন্ডন প্রবাসীর মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগমকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুই হত্যাকারী আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা জাহানের আদালতে এই স্বীকারোক্তি দেয় গ্রেফতারকৃত আসামি তালেব মিয়া এবং জাকারিয়া আহমেদ শুভ। স্বীকারোক্তিতে তারা যুক্তরাজ্য প্রবাসীর স্ত্রী রুমী বেগমকে ধর্ষণ করতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানায়।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। তিনি জানান, সুন্দরী গৃহবধূ রুমীকে ধর্ষণ করাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রুমী বেগমের স্বামী লন্ডনে থাকেন। আড়াই বছর পূর্বে আখলাক চৌধুরীর সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। বাড়িতে রুমী বেগম এবং তার শাশুড়ি মালা বেগম গেইট তালাবদ্ধ রেখে বসবাস করে আসছিলেন। সেখানে কোনো সীমানা প্রাচীর ছিল না এবং পাশে কোনো প্রতিবেশীরাও বসবাস করতেন না। কয়েকদিন পূর্বে লন্ডন প্রবাসী স্বামী আখলাক চৌধুরী তার বন্ধু রিপনকে তার স্ত্রী রুমী বেগমকে একটি মোবাইলের কাভার কিনে দিতে বলেন। রিপন ব্যস্ত থাকায় গত ১১ মে তার ভাই জয়কে দিয়ে এই কাভার রুমী বেগমের বাড়িতে পাঠান। জয় মোবাইল কাভার নিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকার জাকারিয়া শুভ নামে এক বখাটের সাথে পরিচয় হয়। তখন জয়ের সাথে বখাটে শুভও রুমীদের বাড়িতে যায়। জয় মোবাইল কাভারটি রুমী বেগমকে দিলে সেটি তার পছন্দ না হওয়ায় ফেরত দেন। এ সময় রুমী বেগমকে দেখে শুভ তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে।
শুভ জানতে পারে রুমী বেগমদের বাড়িতে অপরিচিত কেউ গেলে গেট খুলে দেয়া হয় না। পাশের বাড়ির ফুরুক চৌধুরীর কর্মরত শ্রমিক তালেব মিয়া মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে গিয়ে কাজ করেন। শনিবার শুভ তালেব মিয়ার সাথে দেখা করে তাকে একটি দোকান থেকে আপ্যায়ন করে এবং মোবাইলে থাকা পর্নোগ্রাফী দেখায়। এরপর তারা পরিকল্পনা করে রবিবার (১৩ মে) রাতে গিয়ে লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী রুমী বেগমকে ধর্ষণ করবে। রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তালেব মিয়া প্রবাসীর মা মালা বেগমকে ডাক দেয় এবং গেইট খুলতে বলে। গেইট খুলার পর তালেব মিয়ার সাথে শুভও ভেতরে চলে যায়। তখন মালা বেগম ওই ছেলের পরিচয় জানতে চাইলে শুভ মালাকে হাতে থাকা ছোরা দিয়ে আঘাত করে। মালা বেগম দৌড়ে ঘরে গেলে পিছনে গিয়ে তারা দুইজন তাকে ওড়ানা দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং ছোরা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তার চিৎকার শুনে পাশে থাকা গৃহবধূ রুমী বেগমও চিৎকার শুরু করেন। এ সময় শুভ রুমী বেগমকেও ছোরা দিয়ে আঘাত করে। রুমী বেগম দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলে তালেব মিয়াও তাকে আঘাত করে। ঘটনার সময় ওই বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বাড়িতে মিটিং ছিল। সেখান থেকে লোকজন চিৎকার শুনে এসে মৃতদেহ দুটি দেখতে পান।
এসপি বিধান ত্রিপুরা আরো জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার আমতৈল গ্রামের আমীর হোসেনের ছেলে তালেব হোসেন (২৪) রুমী বেগমের গ্রামের বাড়ির লোক হওয়ায় সহজেই তাদের বাড়িতে আসা যাওয়ার সুযোগ নেয়। অপরদিকে জাকারিয়া চৌধুরী শুভ (২০) বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এবং এলাকায় একজন বাখাটে প্রকৃতির লোক হিসবে পরিচিত। শুভ তার নানার বাড়িতে বসবাস করতো। তার পিতা অন্যত্র বিয়ে করে ছোটবেলা থেকেই শুভকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
এত বড় ঘটনার পর তালেব মিয়া এবং শুভ তাদের ব্যবহৃত ছোরা এবং রক্তমাখা কাপড় ধুয়ে স্বাভাবিকভাবে এলাকায় চলাফেরা করে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকালে রক্তমাখা কাপড় এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করে। এই ঘটনায় শুভ’র আরেক বন্ধুর অংশ নেয়ার কথা ছিল। তাকেও খুঁজছে পুলিশ। তারপর দ্রুত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমে এই মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।
উলে­খ্য, গত রবিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের হাতে নিজ বসত ঘরে খুন হয় বউ-শাশুড়ী। নিহতরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল­াপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী মৃত রাজা মিয়ার তৃতীয় স্ত্রী মালা বেগম এবং লন্ডন প্রবাসী পুত্র আখলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার এর স্ত্রী রুমি বেগম। সোমবার রাতে নিহত রুমি বেগমের ভাই ডা. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১১। নবীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত হাবিবুর রহমানকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।জাতির পিতার খুনিরা তখন পুরস্কৃত হয়ে বহাল তবিয়তে, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স থাকায় পিতা হত্যার বিচার চাইতে পারছেন না, জিয়া তখন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে প্রতিরাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালাচ্ছে। আর ভাঙ্গার চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগকে। বাসস