অনলাইন ডেস্ক : পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নাজিম উদ্দিনসময়—বৃহস্পতিবার (১৭ মে), সকাল পৌনে ১০টা। তিনদিন বয়সী শিশু ইশরাত জাহান নুরকে নিয়ে দনিয়ায় অবস্থিত আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি আছেন স্ত্রী সাবরিনা ইয়াসমিন আইরিন। তাদের দুই জনকে হাসপাতালে দেখে মোটরসাইকেলে করে অফিসের কাজে যাচ্ছিলেন ইংরেজি দৈনিক ‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এর বিজ্ঞাপন বিভাগের সিনিয়র এক্সকিউটিভ নাজিম উদ্দিন (৩২)। এ সময় যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর তার মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয় একটি দ্রুতগামী বাস। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় নাজিম উদ্দিনের শ্বশুর আরিফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে আমার মেয়েটা হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার বড় মেয়েটির বয়স নয় বছর? নাজিম এখন নেই, কীবাবে তার দুই শিশু সন্তানের? ’
আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমি নিজ মুখে আমার মেয়েকে (সাবরিনা ইয়াসমিন আইরিন) এই খবর দিতে পারিনি। আমি নিজে তাকে মৃত্যুসংবাদ দিতে পারবো না। ওর মা’কে বলেছি, মেয়েকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসো।পরে তাকে মৃত্যুর খবর জানাবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নাজিম উদ্দিনের দুই সন্তান। বড়জনের নাম নুশরাত জাহান মিম। তার বয়স নয় বছর। ছোটজন ইশরাত জাহান নুর। বয়স তিনদিন। বড় মেয়ে তার বাবাকে অনেক ভালোবাসে। খাবার টেবিলে বসলে আগে তার বাবাকে ফোন দেয়। বলে, ‘বাবা তুমি খেয়েছ?’ তার বাবা ‘হ্যাঁ’ বললে, তখন সে বাবাকে বলতো, তুমি তোমার খাওয়ার ছবি পাঠাও। বাবা ছবি পাঠালেই সে খাবার খেতো। এখন আমি কী করবো? কী হবে তার দুই শিশুসন্তানের?’’
দু্র্ঘটনার পর নাজিম উদ্দিনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা সরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসান শরীফ বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেলে করে ফ্লাইওভার দিয়ে আসছিলাম। নাজিম উদ্দিন আমার একটু সামনে ছিলেন। তাকে পেছন থেকে একটি দ্রুতগামী বাস চাপা দেয়। চাপা দিয়েই বাসটি দ্রুত চলে যায়। এ সময় তার ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে যায়। প্রচুর রক্তপাত হচ্ছিল। আমি তাকে একটা সিএনজিতে তুলে দিয়ে পেছন পেছন মোটরসাইকেলে এসেছি। আমরা কয়েকজন একসঙ্গে এসেছি। ঢাকা মেডিক্যালে আসার পর ইসিজি করে চিকিৎসকরা আর কিছুই পাননি।’
নাজিম উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা আরেক পথচারী মো. রাসেল জানান, ‘যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন নাজিম উদ্দিন। তার পেছনে বাস ছিল। ফ্লাইওভারের ওপরে এক লেনের রাস্তা হলেও ওই বাসটি মোটরসাইকেলটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। একপর্যায়ে বাসটি মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে পড়ে যান নাজিম উদ্দিন।’ তিনি বলেন, ‘আমার চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমি তাকে হাসপাতালে রেখে অফিসে চলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আবার ফিরে এসেছি।’
নিহত নাজিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই মোসলেহ উদ্দিন রিফাত বলেন, ‘সরকারকে বোঝাতে হবে, এই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হবে। এভাবে ছাগল-গরু চিনলেই যাকে-তাকে লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। এভাবে যদি যাকে-তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়, তাহলে দেশ থেকে মেধাবি, পরিশ্রমী মানুষগুলো হারিয়ে যাবে। দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। এভাবে অনিয়মের মধ্যে রাস্তায় গাড়ি চলতে পারে না। এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। না হলে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে ঢাকায় এসেছি। একসঙ্গে বড় হয়েছি। আজ ওর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’
জানতে চাইলে ঢাকা ট্রিবিউনের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন্স) বশির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নাজিম উদ্দিন ছিলেন আমাদের অনেক বড় শক্তি। তিনি যে দিকটি দেখতেন, সেটা আর চিন্তা করতে হতো না।’
রাজধানীর শ্যামপুরের করিমোল্লাবাগ ২২৭/৩ ফরিদাবাদের ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন নাজিম উদ্দিন। তার বাবার নাম আনিসুল হক। ভোলা জেলার লালমোহন থানার বালুরচর গ্রামে তার বাড়ি। চার বোন, তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।
হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন নাজিম উদ্দিনের এলাকা ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চোধুরী শাওন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় এভাবে মানুষের মৃত্যু আর দেখতে চাই না। আজ তাকে হারিয়েছি। দুই বাসের গতির প্রতিযোগিতায়
এই অবস্থা হয়েছে। প্রতিদিনই বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। সরকারকে অবশ্যই বাসচালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটু কঠোর হতে হবে।’
ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মকর্তার মৃত্যু ঘটনায় বাস জব্দ, আটক ২ :
রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের (৩২) মৃত্যুর ঘটনায় দুটি বাস জব্দ এবং ওই বাসের চালক ও হেলপারকে আটক করেছে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে দুঘর্টনার পরপরই দুটি বাস জব্দসহ চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন— শ্রাবণ পরিবহনের চালক মো. ওহিদুল (৩৫) এবং মঞ্জিল পরিবহনের হেলপার মো. কামাল (৩২)। এঘটনায় ওই দুটি বাস জব্দ করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ঘটনায় দুটি পরিবহনের মধ্যে শ্রাবণ পরিবহনের একটি বাস ও মঞ্জিল পরিবহনের একটি বাস জব্দ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মঞ্জিল পরিবহনের চালক ও শ্রাবণ পরিবহনের হেলপার ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঢাকা ট্রিবিউনের কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন :
নাজিম উদ্দিনের (৩২) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতালে থাকা তার স্বজনরা জানিয়েছেন বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ ঢাকা ট্রিবিউন অফিসে নেওয়া হবে। সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে ভোলায় তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে নাজিম উদ্দিনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা ট্রিবিউনের কর্মকর্তার মৃত্যু :
নাজিম উদ্দিনরাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপরে বাসের ধাক্কায় ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তার নাম নাজিম উদ্দিন (৩২)। বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকাল পৌনে ১০টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশ ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নাজিম উদ্দিন ঢাকা ট্রিবিউন সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
যাত্রাবাড়ী থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন নাজিম উদ্দিন। ৩২ বছরের তরতাজা প্রাণ। গন্তব্য গুলিস্তান। মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে উঠতেই তিনি পড়ে গেলেন দুই বাসের প্রতিযোগিতার মুখে। মঞ্জিল ও শ্রাবণ সুপার পরিবহনের দুটি বাস মরিয়া—কে কার আগে যাবে। শ্রাবণ সুপার পরিবহনের বাসটি নাজিমের মোটরসাইকেলটিকে দিল পেছন থেকে ধাক্কা। ছিটকে সেতুর সড়কে পড়ে গেলেন তিনি। নিমেষে বাসটি চলে গেল তাঁর বুকের ওপর দিয়ে।
মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে আজ এভাবেই জীবনাবসান ঘটে নাজিম উদ্দিনের। নগরের বাসে বাসে বিভীষিকাময় প্রতিযোগিতার আরেক বলি তিনি।
নাজিম উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা এক পথচারী মো. রাসেল জানান, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন নাজিম উদ্দিন। তার পেছনে একটি পরিবহনের বাস ছিল। ফ্লাইওভারের ওপরে এক লেনের রাস্তা হলেও ওই বাসটি মোটরসাইকেলটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। একপর্যায়ে বাসটি মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে পড়ে গিয়ে চালক নাজিম উদ্দিন গুরুতর আহত হন।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে নাজিম উদ্দিনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কিভাবে এই দুর্ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।