অনলাইন ডেস্ক : এখানে সব কিছুই চলে রুটিন অনুযায়ী। এই বোধ শক্তিটুকুর কারণেই বোধয় ওরা প্রথম বিশ্বর মানুষ আর আমরা তৃতীয় বিশ্বের। হোটেল থেকে ট্রেন, তারপর পালে দো ফেস্টিভাল ভবন প্রতিদিন সব কিছুই হয় পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী। মানুষের হট্টগুলো কম না, কিন্তু বিশৃঙ্খলা চোখে পরেনি কোনো দিন।
গত সোমবার ফেস্টিভাল ভবনের তিনতলায় প্রেস লকারে একটি চিঠি পেলাম। তাতে লেখা, উৎসবে আমন্ত্রিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন কান শহরের মেয়র ডেভিড লিসনার্ড।
নিয়ম অনুযায়ী লকারে আসা চিঠিটি প্রেস অফিসে জমা দিয়ে মিললো নিমন্ত্রণের কার্ড।
দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর কানের ঐতিহ্যবাহী লে শুকে নামক জায়গায় মেয়রের কর্মস্থল পালে দো লা ক্যাস্তর। এখানেই বুধবার দুপুর ১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা) উৎসবের ৭১তম আসরের নবম দিনে দুপুরের খাবার খাওয়ার সুযোগ পেলাম।
হোটেল দি ভিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওপরে তাকালে চোখে পড়ে পালে দো লা ক্যাস্তরের আভিজাত্য। মূল সড়ক থেকে উঁচু পথে হেঁটে যেতে হয় সেখানে। হাঁটলে মনে হয় কেউ পেছন থেকে আটকে রাখছে! সেই পথ শেষ হলে আছে সিঁড়ি। মিনিট তিনেক ধরে ওঠার পর কানে ভেসে এলো বাদ্যযন্ত্রের সুর।
পালে দো লা ক্যাস্তরের ফটকের মুখে অতিথিদের জন্য প্লাস্টিকের গ্লাসে পরিবেশন করা হচ্ছে অরেঞ্জ জুস, শরবত হ নানা রকম পানীয়। যে যেটা খুশি নিচ্ছেন। অতিথিদের বরণ করে নিতে ফটকের ভেতরে দু’পাশে বাহারি সাজে দাঁড়িয়ে আছেন বয়স্ক মহিলারা। আরেকটু ভেতরে গিয়ে চোখে পড়লো সুর তুলছেন ব্যান্ড পার্টির সদস্যরা। ঢোল বাজাচ্ছে এক শিশু।
অন্যপাশে মেয়রের দেয়া নিমন্ত্রণপত্র জমা নিয়ে অতিথিদের দেয়া হচ্ছে অলিভ অয়েল। বোতলের বাইরে ৭১তম কান উৎসবের স্মারক। অলিভ অয়েল নিয়ে সোজা হেঁটে গেলাম।
ততক্ষণে টেবিলে বসে খাবারের স্বাদ নিতে শুরু করেছেন অতিথিরা পানি, বাগেল, বাটার আগে থেকেই পরিবেশন করে রাখা হয়েছে। বুফেতে পরিবেশন করা হয়েছে সামুদ্রিক মাছ, সবজি, ডিম ও মিষ্টান্ন।
দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম পালে দো লা ক্যাস্তরের একেবারে সামনে। সেখানে ব্যারিকেডের একপাশে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন উৎসুক সাংবাদিকরা। একটি টেবিলের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া। এখানে বসে খাবেন ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকরা। আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের বাইরে একমাত্র তারাই পেয়েছেন এ দিনের মধ্যাহ্নভোজের নেমন্তন্ন। তারা আসবেন আসবেন করে অপেক্ষা করছি।
এই ফাঁকের সাগরপাড়ের শহরটির সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পালে দো লা ক্যাস্তর ছাড়া কানের আর কোথাও থেকে একসঙ্গে এতকিছু দেখার সুযোগ নেই। এখানে দাঁড়িয়ে শহরের প্রায় পুরোটাই দেখে ফেলা যায়!
নীল আকাশের নিচে একপাশে সাগরের নীল পানিরাশি। তীরে অনেক ইয়ট আর স্পিডবোট। সাগরের অন্য পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। তার মধ্যেই ঘর-বাড়ি, রিসোর্ট, হোটেল। এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।
এর মধ্যে একে একে প্রবেশ করলেন, প্রতিযোগিতা বিভাগের সভাপতি অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট, ‘টোয়াইলাইট’ তারকা ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, জেমস বন্ড সিরিজের ‘স্পেক্টর’ ও ‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজের ফরাসি অভিনেত্রী লেয়া সেদু, ‘সেলমা’ ছবির পরিচালক আভা ডুভারনে, বুরুন্ডির গায়িকা খাজা নিন, ‘ক্রাউচিং টাইগার হিডেন ড্রাগন’ তারকা চ্যাং চেন, ‘ব্লেড রানার ২০৪৯’ ছবির পরিচালক ডেনিস ভিলেন্যুভ, রুশ পরিচালক আন্দ্রে জিভিয়াজিন্তসেভ ও ফরাসি পরিচালক রবার্ট গেদিজিয়ন।
কেট ব্ল্যানচেট পালে দো লা ক্যাস্তরে ঢুকে কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে হাত মেলালেন, অটোগ্রাফ দিলেন। এরপর ৯ বিচারক পেছনে সাগরকে রেখে একসঙ্গে দাঁড়ান ফটোসেশনে। তাদের বিচারেই চূড়ান্ত হবে উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপাম জিতবে কোন ছবি। তাদের সঙ্গে খেতে এসেছেন উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো। খাওয়ার সময় ছবি তোলা বারণ। তাই সবাই একসঙ্গে খেতে বসলেন।
পালে দো লা ক্যাস্তরের ওপরের অংশে রাখা বিশাল একটি ঘড়ি বেজে উঠলো দুপুর ২টায়। মধ্যাহ্নভোজও প্রায় শেষের দিকে। নিমন্ত্রণপত্রে কানের মেয়র উল্লেখ করেন, ‘ফরাসি রেসিপি দিয়ে বানানো খাবারের মাধ্যমে আমাদের এই শহরের অন্যরকম একটি দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ হবে আপনাদের। বলাবাহুল্য উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই এই স্বাদ পান না।’
দুপুরেরর খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় চোখে পড়লে একটি চিত্র প্রদর্শনীর। যেখানে বিশ্ব সেরা কোরিওগ্রাফারদের ছবি টানানো হয়েছে। মজার হলো এই ছবিগুলোর ঠিক মাঝ খানেরটা বেশ পরিচিত। কারণ এটা বাংলাদেশের বিবি রাসেলের ছবি।