দর্পণ ডেস্ক : ভিয়েতনামের সুনসান বৃষ্টি অরণ্যে গবেষণা করতে পুরো দল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন গ্লোবাল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশনের পিএইচডি স্কলার অ্যান গুয়েন। কয়েকটি গাছকে চিহ্নিত করে লাগানো হয়েছিল ৩২টি মোশন-অ্যাক্টিভেটেড ক্যামেরা। জঙ্গলের সীমান্তের বাইরেও লাগানো একই রকমের ক্যামেরা। মনিটরে চোখ রেখে বসে চমকে উঠলেন অ্যান।প্রায় আড়াই ফুট উচ্চতার ছোট ছোট প্রাণীগুলো লাফালাফি করছে গাছের আড়ালে। ইঁদুরের মতো মুখ, রুপালি পিঠের শেভ্রোটাইন। অতি পরিচিত ভাষায় মাউস ডিয়ার।
বিরল প্রজাতির এই ভিয়েতনামি মাউস ডিয়ার লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলেই ধারণা ছিল প্রাণীবিদদের। অ্যান বলেছেন, শেষ এমন ইঁদুরমুখো হরিণ দেখা গিয়েছিল ১৯৯০ সালে। প্রায় ৩০ বছর পরে ফের মাউস ডিয়ারের অস্তিত্বের সন্ধান মিলল ভিয়েতনামেই। বিরল খোঁজ বললেন প্রাণীবিদরা।
সায়েন্স জার্নাল ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’-এ এই মাউস ডিয়ারের খোঁজের কথা বিস্তারিত লিখেছেন অ্যান। Tragulus versicolor বা মাউস ডিয়ারের এই প্রজাতির প্রথম খোঁজ মেলে ১৯২০ সালে, হো চি মিন সিটি থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরত্বে নেহ ট্র্যাংয়ের কাছে। এরপরে ২০০৪ সালে মাউস ডিয়ারের কাঠাকাছি প্রজাতি গ্রেটার মাউস ডিয়ারের (টি নাপু)খোঁজ মেলে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশ্বের ২৫টি বিরল প্রজাতির মধ্যে এই মাউস ডিয়ার অন্যতম। গ্লোবাল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন বহু বছর ধরেই এই বিরল প্রজাতির হরিণের খোঁজ করছিলেন।
অ্যান বলেছেন, ‘‘এই খোঁজ আমাদের লক্ষ্যের প্রথম সিঁড়ি। আমরা মনে করছি এই জঙ্গলের মধ্যেই আরও অনেক মাউস ডিয়ার রয়েছে। তাঁদের সন্ধান করা হচ্ছে।’’ অ্যানের সঙ্গেই ভিয়েতনামের এই বৃষ্টি অরণ্যে বিরল প্রজাতির প্রাণীদের খোঁজে এসেছিলেন বার্নে লঙ এবং অ্যান্ড্রু টিলকার। তাঁরা জানিয়েছেন, অরণ্যের এই গভীরে এখনও চোরাশিকারিদের পা পড়েনি। তাই মাউস ডিয়ারের একটি পরিবার এখনও বেঁচে রয়েছে এখানে। মাউস ডিয়ারদের চলাফেরা খুবই সতর্ক। একসঙ্গে এক ঝাঁকে এই প্রাণীদের দেখা মেলে না সাধারণত। অ্যান্ড্রু টিলকার জানিয়েছেন, এই হরিণদের গতিবিধি দেখার জন্য জঙ্গলের বাইরে গ্রামের সীমান্ত লাগোয়া এলাকাতেও ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
অ্যান জানিয়েছেন, দক্ষিণ ভিয়েতনামের পাহাড়ঘেরা জঙ্গলের নিচু এলাকায় প্রথমে তিনটি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। গত পাঁচ মাসে ২৭৫টি প্রাণীর ছবি ধরা পড়ে এই ক্যামেরাগুলিতে। তবে মাউস ডিয়ারের খোঁজ মেলেনি। পরে আরও ২৯টি ক্যামেরা বসানো হয় জঙ্গলের নানা জায়গায়। ১,৮৮১ টি প্রাণীর ছবি লেন্সবন্দি হয়। তাদের মধ্যে ছিল দুটি মাউস ডিয়ারও। গবেষকদের তৎপরতা এরপর আরও বেড়ে যায়।
ফিলিপাইন মাউস ডিয়ার একই রকমভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা মেলে এদের। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এই মাউস ডিয়ারদের বিরল তালিকাভুক্ত করে। জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন শুধুমাত্র বিরল নয় প্রায় অবলুপ্তির খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে এই মাউস ডিয়াররা। তার কারণ অনেক। প্রথমত আকারে ছোট হওয়ায় এদের দল বেঁধে শিকার করে চিতা, বন্য কুকুররা। চোরাশিকারিদের হামলা তো রয়েছেই। ভিয়েতনামি এই মাউস ডিয়ারদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন।