দর্পণ ডেস্ক : মরিয়ম নবতানজি, বয়স ৩৬। ১২ বছর বয়সে তার চেয়ে ২৮ বছরের বড় এক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের প্রথম বছরে জমজ সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
একটি বিরল জিনগত সমস্যায় ভুগছেন আফ্রিকার দেশ উগান্ডার এই নারী। আর এ সমস্যার কারণে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ৪৪টি সন্তান জন্ম দিয়েছেন মরিয়ম।
তবে তার জন্য কষ্টের ব্যাপার হলো, এতগুলো সন্তানকে একাই সামলাতে হচ্ছে তাকে। কারণ প্রায় চার বছর আগে স্ত্রী-সন্তান রেখে তার স্বামী চলে গেছেন। এরপর থেকে গত চার বছর ধরে একাই এই বিশাল সংসার নিজের কাঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মরিয়ম।
মরিয়মের বয়স এখন ৪০ বছর। তার সন্তান জন্মদান বন্ধ করতে চিকিৎসকরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। চারটা ছোট ঘরে এতগুলো সন্তান নিয়ে বসবাস করা মরিয়মের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। মরিয়ম তার সন্তানদের নিয়ে যে জায়গায় বসবাস করে সেটা কফি ক্ষেত বেষ্টিত।
বিয়ের প্রথম দিকে মরিয়মকে জন্মনিরোধক পিল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন এক চিকিৎসক। কারণ তার ডিম্বাশয় অস্বাভাবিক রকমের বড় ছিল। যে কারণে এই পিল খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান তার চিকিৎসক। তাই প্রথম জমজ সন্তান জন্ম দেয়ার পর থেকে তার বাচ্চা হতেই থাকে।
উগান্ডার পরিবারগুলো সাধারণত বড় হয়ে থাকে। গড়ে প্রত্যেক নারী ৫-৬টি সন্তানের জন্ম দেন। মরিয়মের বাবাও বিভিন্ন নারীর গর্ভে ৪৫টি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জন্মাহারের দেশ এটি। কিন্তু সে হিসেবেও মরিয়মের পরিবারটি অনেক বড়।
২৩ বছর বয়সে ২৫টি সন্তান জন্ম দেন মরিয়ম। এ সময় তিনি তার চিকিৎসককে সন্তান জন্মদান ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে আবারও জানান, তার গর্ভবতী হওয়া উচিত। কারণ তার ডিম্বাশয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে চিকিৎসা পেয়ে গত ছয় বছর আগে মরিয়মের সন্তান জন্ম দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
চার বছর আগে মরিয়মের এক সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে তার স্বামী প্রায়শই সপ্তাহখানেকের জন্য বাইরে চলে যেতেন। এরপর একদিন উধাও হয়ে যান তিনি। আর মরিময়ের কাছে ফিরে আসেননি। মরিয়মের পরিবারে তার স্বামীর নামটি এখন অভিশাপ।
মরিয়ম বলেন, ‘আমি খুব দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বামী আমাকে বিরাট ভোগান্তিতে ফেলে গিয়েছেন। বাচ্চাদের দেখাশোনা ও অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করে আমার পুরো সময় কাটে।’
কাম্পালার মুলাগো হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. চার্লস কিগুন্ডু বলেন, ‘অধিক ডিম্বাণু উৎপাদনের জিনগত সমস্যা রয়েছে মরিয়মের, যেটা একবারে অনেকগুলো ডিম ছাড়ে। ফলে একাধিক সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটা একটা জিনগত সমস্যা।’