গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের বেতমোর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ওমর ফারুক’র
জীবনে অন্ধকার নেমে আসে এ বছরের শুরুতে। এক রৌদ্রজ্জ্বল সকালে যখন স্কুলে
যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো শিশুটি তখস হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ওমর।
স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ক্ষনিক সময়ের জন্য সুস্থ হলেও
আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। এরপর ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়।
সেখানে ধরা পড়ে তার হার্টের বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে।
ছেলের এ অসুস্থতার খবরে সে ভেঙ্গে পড়ে স্বামী হারানো ওমরের অসহায় মা
শেফালী বেগম। নিজের জমানো শেষ সম্বলটুকু দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করালেও দেড়
লাখ টাকার কারনে বন্ধ হয়ে যায় ওমরের চিকিৎসা। এতে ক্রমশ: মৃত্যুর দিকে
ধাবিত হতে থাকে ওমর ফারুক। ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া
মেয়ে রিয়ামনিরও পড়া লেখা বন্ধ হয়ে যায়। এ অসহায় পরিবারের দুরাবস্থার কথা
জানতে পেরে তার চিকিৎসা সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে কলাপাড়ার বঙ্গবন্ধু সমাজ
কল্যান পরিষদের সদস্যরা।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত আটটায় ওমরের চিকিৎসার জন্য
এ টাকা তার মা শেফালী বেগমের হাতে হস্তান্তর করা হয়। কলাপাড়া প্রেসক্লাব
মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ টাকা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সাংসদ
অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান শিশুটির চিকিৎসা ফান্ডে আরও ৫০ হাজার টাকা
দেয়ার ঘোষনা দেন।
বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যান পরিষদের সভাপতি মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও
সংবাদকর্মী মেজবাহউদ্দিন মাননু’র সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য
রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র
হাওলাদার, বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম।
অনুষ্ঠানে ওমর ফারুকের মা শেফালীর বেগমের হাতে প্রধান অতিথি চিকিৎসা টাকা
তুলে দেন এবং তাকে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন। এছাড়া চিকিৎসা পরবর্তী
ওমরের আরও কয়েক লাখ টাকা দরকার। এজন্য তারা সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে
আসার আহবান জানান।
বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যান পরিষদের উপজেলা সম্পাদক মহব্বত হোসেন, পৌর সভাপতি
এস এম হারুন অর রশিদ মুক্তা, সিনিয়র সহ সভাপতি এস কে রঞ্জন, সম্পাদক
স্বজল কর্মকার ও সহ- সভাপতি শামিম বেপারী বলেন, ’সদা হাস্যোজ্জ¦ল ওমরের
মলিন মুখ তাঁদের ব্যথিত করেছে। এই কৈশোরে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলেও
তার চোখে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা শক্তি দেখে আমরা শক্তি পাই কিছু করার।’
তারা আরও বলেন, ’এই শিশুটির চিকিৎসার টাকা সংগ্রহের জন্য কলাপাড়ার
বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করি আমরা।
শিক্ষার্থীরা তাদের একদিনের টিফিনের টাকা ওমরের চিকিৎসা সহায়তা ফান্ডে
প্রদান করেন। একই সাথে এগিয়ে আসে সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা। মাত্র
কয়েকদিনে তারা এক লাখ টাকা সংগ্রহ করেন।’