দর্পণ ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর এবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এই দুই নেতা আজ বৈঠকে বসবেন।
মমতা বলেন, ‘এটি একটা চেয়ারের সঙ্গে একটি চেয়ারের বৈঠক। আমি এর আগে যখনই দিল্লি এসেছি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেছি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অমিত শাহ এখন ঝাড়খণ্ডে রয়েছেন। তার মন্ত্রণালয়ের কাছে মমতার পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। আজ দুপুরের পর তাদের বৈঠক হতে পারে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্ভাব্য সাক্ষাতকে আনুষ্ঠানিক এবং সৌজন্যমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। কারণ, কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে তৃণমূলের ঝামেলা শুরু গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই। চলতি বছরের মে মাসে কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর বিজেপি সভাপতির বিরুদ্ধে চটেছিলেন মমতা।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, অমিত শাহের মিছিল শেষ হওয়ার পরই বিজেপির কিছু মাস্তান লাঠি দিয়ে বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুর চালিয়েছে।
বিজেপি ক্ষমতায় ফিরে অমিত শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর দ্বৈরথ বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন্দ্রের পাঠানো পরামর্শকে রাজ্যের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। দুই পক্ষের মনোমালিন্য হয়েছে মাওবাদী এলাকা থেকে আধাসেনা সরানো বা সারদা মামলায় পুলিশকর্তা রাজীব কুমারকে সিবিআই তলব নিয়ে। সম্প্রতি আসামের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সেটা আরও বেড়েছে।
কলকাতার রাস্তায় মিছিল করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার রাজ্যে একজনের শরীরেও হাত দিতে দেবেন না তিনি। অমিত শাহ ও মমতার বৈঠক হলে এসব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এনআরসি নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে ঝাড়খণ্ডে অমিত শাহ বলেছেন, ‘কোনো ভারতীয় কি অন্য রাষ্ট্রে গিয়ে পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে পারবেন? তাহলে ভারতেই বা তা হবে কেন?’
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘উনি (অমিত শাহ) আমাকে কিছু বলেননি। কিছু বললে আমি আপনাদের জানাব। বাংলায় এনআরসির কোনো কথা নেই। আপনারা একটা ভুল করছেন। এনআরসি অসম চুক্তির অংশ। দেশের বাকি অংশের জন্য নয়। বাংলায় এমন প্রস্তাব, পরামর্শ নেই। আর আমি করবও না।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য ও কেন্দ্রের সহযোগিতা তথা সাংবিধানিক সৌজন্যের পথ ধরেই আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। এর পরই অমিত শাহের সময় পেলে কাল তার সঙ্গে দেখা করার কথা জানান মমতা।
এর আগে কখনও সেভাবে মমতা ও অমিত শাহের আলোচনা হয়নি। একবারই অমিত এবং মমতা একটি বৈঠকে একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবর্ষের সেই বৈঠকে দুই নেতার মাঝে বসেছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে নতুন রাজ্যপাল নিয়োগের কথা জানিয়ে মমতাকে ফোন করেছিলেন অমিত শাহ। মমতা শুধু সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, খবরটি সংবাদমাধ্যম থেকে পেয়েছি।’