পটুয়াখালীর বাউফলে এক তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আটকের পর অভিযুক্ত তরুণকে বিচারিক আদালতে না পাঠিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করে ১০ মাসের কারাদণ্ড দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আদালত। আগামী ২২ আগস্ট থানায় সংরক্ষিত সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র ও অভিযুক্তের ফরোয়ার্ডিংসহ বাউফল থানার ওসিকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন এই আদেশ দেন।
পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে দৈনিক ‘যুগান্তর’ পত্রিকার বাউফল প্রতিনিধি শিবলী সাদেককেও সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতের আদেশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দৈনিক ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় ‘কিশোরীর উপস্থিত বুদ্ধিতে বাউফলের তরুণ শ্রীঘরে’ শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হয়। যা আদালতের নজরে আসার পর তা দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮-এর ধারা ১৯০ (১) (সি) অনুযায়ী আমলে গ্রহণ করা হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার পূর্ব অলিপুরা গ্রামের আজাহার হাওলাদারের ছেলে ইমরান গান শেখার জন্য বাউফলের সাহাপাড়ায় একজন সঙ্গীত শিক্ষকের বাসায় যান। তিনি বাড়িতে না থাকায় ইমরান তার দশম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
ইমরান পানি খাওয়ার ছলনায় মেয়েটিকে জোর করে মুখ চেপে ধরে পাশের রুমে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই কিশোরী কৌশলে তার হাত থেকে ছুটে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানায়। ইমরানও পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ ইমরানকে ওই দিন রাতে বাউফলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিযুষ চন্দ্র দে’র কাছে নিয়ে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুষ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইমরানকে ১০ মাস ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

আদালত তার আদেশে বলেছেন, পুলিশ অভিযুক্তকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে (বাউফল) না পাঠিয়ে তাকে মোবাইল কোর্টের সামনে উপস্থাপন করেন। যা দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ আইনের ধারা ১৬৭-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে বাউফল থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান আদালত থেকে এরকম কোনও আদেশ এখনও হাতে পাননি বলে জানান। একই সঙ্গে তিনি আটকের পর অভিযুক্ত ইমরানকে মোবাইল কোর্টে পাঠানোর কথাও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়েই অভিযুক্তকে সাজা দিয়েছেন।’
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে যুগান্তরের বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি শিবলী সাদিক বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি সংশ্লিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সংবাদটি লিখেছি। সংবাদে যা প্রকাশিত হয়েছে তাই আমার ভাষ্য।’
যোগাযোগ করা হলে বাউফল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুষ চন্দ্র দে বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ঘটনাটি জানালে আমি স্পটে যাই। ঘটনাস্থলেই মোবাইল কোর্ট বসিয়ে আমি তাকে মোবাইল কোর্ট আইনের ৩৫৪ ধারায় ১০ মাস ১০ দিনের দণ্ড দেই। আমাকে বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল।’
কিন্তু ধর্ষণ চেষ্টার মতো অপরাধের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের মাধ্যমে অভিযুক্তকে বিচারিক আদালতে না পাঠিয়ে মোবাইল কোর্ট করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট আইনের ৩৫৪ ধারায় ‘শ্লীলতাহানী’র বিষয়ে দণ্ড দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের বিচার কোনও ম্যাজিস্ট্রেটই করতে পারেন না। এটা পারেন শুধু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক। এই ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকেন জেলা জজ। এই ঘটনায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের কোনও সুযোগ নেই। আর এখানে যৌন হয়রানির যে বিষয় বলা হচ্ছে, সেটা কোনওভাবেই তা নয়। কারণ একা ঘরে কখনও এটি হয় না। এটা সম্পূর্ণ ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ। এখানে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বরং অনেক সহানুভূতি দেখানো হয়েছে।