দর্পণ ডেস্ক : মাছ ধরার ট্রলারসহ ৭ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে কক্সবাজার শহরের সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে। মাঝিসহ জীবিত উদ্ধার হয়েছে ২ জন। আরও নিখোঁজ রয়েছে ৮ জেলে। বুধবার ভোর ৫ থেকে সকাল ১০টার মধ্যে ৭ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি ফখরুল করিম জানান, বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভাঙাচোরা একটি মাছ ধরার ট্রলার ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়। পরে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে প্রথমে ট্রলারটির আশপাশে চারটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় এবং পরে সকাল ৮টার দিকে আরও দুটি মরদেহ ট্রলারের পাটাতনের ওপর পাওয়া যায়। এর দুই ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে লাবনী পয়েন্টে আরো একটি মরদেহ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, সকাল ৬টার দিকে সৈকতের ডায়বেটিস হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে একজন ও নাজিরার টেক থেকে একজন জেলেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে লাইফ গার্ডের উদ্ধার কর্মী ও এলাকাবাসী।

লাইফ গার্ডের উদ্ধার কর্মী রশিদ আহমদ জানান, লাবনী পয়েন্টের তীরবর্তী সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়। তখন সে বেঁচে ছিল। একইভাবে এলাকাবাসী নাজিরার টেক থেকে একজন উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সমুদ্রের সাথে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান দুজন হচ্ছেন মুগুল সর্দারের ছেলে মনির মাঝি এবং ওয়াজ উদ্দিন ফিটারের ছেলে মো. জুয়েল। তাদের দুজনই হচ্ছেন ভোলার চরফ্যাশনের পূর্ব মাদ্রাজ পাড়ার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে মনির মাঝি হচ্ছেন এই ট্রলারের মাঝি আর মো. জুয়েল হচ্ছেন ট্রলারের মালিকের ছেলে।

তারা জানান, গত ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ভোলা চরফেশনের শামরাজ ঘাট থেকে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে পাড়ি দেয়। তারা মোট ১৭ জন এই ট্রলারে ছিলেন। গত ৬ জুলাই (শনিবার) ভোরে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া ও উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি উল্টে যায়। এরপর কে কোথায় হারিয়ে গেছে তা জানা যায়নি।

এ সময় মনির মাঝি ও মো. জুয়েল ট্রলার ধরে রাখেন। সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় একবার ট্রলার থেকে ছিটকে পড়ে, আবার ধরে। এভাবে তারা তিনদিন ট্রলার ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন। পরে ঢেউয়ের ধাক্কায় ট্রলার থেকে ছিটকে দূরে চলে যায় দুজন। এরপর তারা সাগরে ভেসে থাকার চেষ্টা করে।

এক সময় সাগরের তীরে পৌঁছলে কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে এসে তাদের ৭ জন জেলের মৃতদেহ পাওয়ার খবর পাই। তারা জানান, ট্রলারে ফয়জুল্লাহ, জিয়াদ, সেলিম মিস্ত্রি, বেলায়েত, তৌসিফ, জাহাঙ্গীর, মাসুদ, ওলিউল্লাহসহ তারা ১৭ জন ছিলেন।

কক্সবাজার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. খাইরুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে এসব লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।