গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: বাহারি রঙের হাইব্রীড তরমুজে ছেয়ে আছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আল আমিনের তরমুজ ক্ষেত। এবছর হাইব্রিড তরমুচ চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। ফলন ভাল হওয়ায় তার মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।

গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এক একর জমিতে হাইব্রিড জাতীয় তরমুজ চাষ করে লাভ করেন প্রায় চার লাখ টাকা। এবার তিনি ১৫ একর জমিতে বাহারী রঙের হাইব্রিড তরমুজের চাষ করেছেন। স্থানীয় জাতের তরমুজের ভিতরটা লাল হলেও হাইব্রিড জাতের এ তরমুজের ভিতরটা লাল, হলুদ ও কমলা রঙের হয়, আবার স্বাদও মিষ্টি।

ক্রেতারা রঙের এ ভিন্নতা দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে এ তরমুজের উপর। অপরদিকে বাজারে চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষরা। এসব তরমুজ ঢাকার কারওয়ান
বাজার-বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবং ভাগ্য বিরুপ না হলে এ বছর অর্ধকোটি টাকা লাভ হবে বলে জানায় আল-আমিন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর গলাচিপায় এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজের ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে নানা প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন চালান হচ্ছে হাজার হাজার তরমুজ। এবার এখন পর্যন্ত বাজারও বেশ চড়া। চাষীরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। প্রচলিত জাত ছাড়াও এবার ব্যতিক্রম কিছু জাতের হাইব্রীড তরমুজ চাষ হয়েছে এ এলাকায়। গলাচিপা কৃষি অফিস আশা করছে প্রকৃতি বিরূপ না হলে উৎপাদন পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে টাকার অংকে কমপক্ষে আটশ’ কোটি টাকায় বিক্রী দাঁড়াতে পারে। আশাব্যঞ্জক উৎপাদন ও মূল্যের কারণে কৃষকরাও বেশ খুশি।

উপজেলা কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এবার গলাচিপা উপজেলায় মোট সাত হাজার ছয় শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় কয়েকগুন বেশি। এবার গলাচিপা পৌর এলাকায় আল আমিন নামের এক কৃষক ১৫ একর জমিতে হাইব্রীড জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এগুলোর ভিতরটা হলুদ, লাল, কমলা রঙের এবং খেতে খুব মিষ্টি।

সূত্রটি আরও জানায়, প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ৩৫ মেট্রিক টন হিসাবে উপজেলায় তরমুজের উৎপাদন হবে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সার ও কীটনাশক
ব্যবহারের কারণে গতবারের তুলনায় এবার ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তরমুজ বেশ আগাম বাজারে আসতে শুরু করায় কৃষকরা দাম ভাল পাওয়ায় লাভবান হচ্ছে।

তরমুজ চাষি আল আমিন জানান, ‘গত বছর হাইব্রীড জাতের এ তরমুজের বীজ দেখে প্রথমে আমি এক একর জমিতে চাষ করি। ভাল দামে বিক্রি হওয়ায় এবার ১৫ একর জমিতে হলুদ, লাল ও কমলা রঙের সহ চার ধরণের তরমুজ চাষ করেছি। এতে শুধু বীজ কিনতেই প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি কেজি বীজ জাত ভেদে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া জমি, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরী ১৫ লাখ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ হাইব্রীড জাতের তরমুজ চাষ করতে স্থানীয় জাতের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ। এ ফসলটির সুবিধা হলো আগাম ফলন হওয়ায় বিক্রিতে ভাল দাম পাওয়া যায়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, সামনে কোন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে তরমুজ চাষীরা আশাতীত লাভবান হবেন। ধানের পরে যে
কয়েকটি ফসল এ অঞ্চলের কৃষকের কাছে লাভজনক হয়ে উঠেছে তার মধ্যে তরমুজ ইতোমধ্যে অন্যতম হয়ে দাড়িয়েছে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তরমুজ চাষ করে কৃষক আরও লাভবান হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।