দর্পণ ডেস্ক : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্র ঘোরি মো. ওয়াসিম আদনানকে (২১) বাসচাপায় হত্যার অভিযোগে উদার পরিবহনের বাসচালক জুয়েল আহমদকে (২৬) আটক করা হয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে তাকে আটক করা হয়। জুয়েল আহমদের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাড়াউরা গ্রামে। সুরমা থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাসচালককে আটক করে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা।
শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শেরপুর বিশ্বরোডে হেলপারের ধাক্কায় বাস থেকে পড়ে প্রাণ হারান ওয়াসিম আদনান। তিনি সিকৃবির বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামের ঘোরী মো. আবু জাহেদ মাহবুব ও ডা. মীনা পারভিনের ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের দেবপাড়ায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন ওয়াসিমসহ ১১ জন শিক্ষার্থী। সেখান থেকে ফেরার সময় তারা রোডের উদার পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। এসময় ভাড়া নিয়ে ঐ বাসের হেলপারের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বাসের ওই হেলপার ওয়াসিম এবং আরেক শিক্ষার্থী রাকিবকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এসময় রাকিব বাস থেকে নামতে সক্ষম হলেও ওয়াসিমের পায়ের উপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যায়। পরবর্তীতে ওয়াসিমকে দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী সদর হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসা সিকৃবির ভিসি অধ্যাপক মতিয়ার রহমান হাওলাদার সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে।’
এদিকে, ঘটনার পর রাতেই উদার পরিবহনের সেই বাসটিকে (ঢাকা মেট্রো-ভ-১৪-১২৮০) আটক করে শেরপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সিলেট নগরের প্রবেশদ্বার হুমায়ন রশিদ চত্বরে সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বলিয়ে বিক্ষোভ করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা কয়েকটি টার্মিনালে ভাংচুর চালায় ও লাঠি মিছিল করে।
এসময় টার্মিনালে রাস্তার ওপার থেকে টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার ক্যামেরায় মিছিলের ছবি তুলতে গেলে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যামেরাম্যানদের ধাওয়া করে। কয়েকজন বিক্ষুব্ধ ছাত্র হুমকি দিয়ে টিভির ক্যামেরা কেড়ে নিতে উদ্যত হয়। এসময় রিপোর্টার ও ফটোজার্নালিস্টরা তাদের রক্ষা করতে এলে বিক্ষুব্ধরা তাদের উপর চড়াও হয়।
অন্যদিকে, পরিবহন শ্রমিকরাও অবস্থান নিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে কদমতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে বাসটির কাউন্টার ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফেরান।
এদিকে, বাসচাপায় ওয়াসিমের মৃত্যু হলেও এ ঘটনায় মামলা করবে না তার পরিবার। তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ নিতে আবেদন করে। পরে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সেলিম মিয়া। রাতেই ওয়াসিমের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়, বলেন তিনি। মামলা করতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও স্বজনরা অনুরোধ জানালেও রাজি হননি ওয়াসিমের বাবা।