দর্পণ ডেস্ক : মঙ্গলবার বাসচাপায় ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে সারােদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দিনভর বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় রাজধানীর নর্দ্দায় সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার সময় এই আহ্বান জানায় তারা।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে মাইশা নূর নামে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস(বিইউপি) শিক্ষার্থী বলেন, আজকের মতাে তারা সড়ক থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছেন। তবে বুধবার আবার সকাল ৮টায় সড়কে অবস্থান নেবেন তারা। এজন্য সহপাঠীদের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এখানে রাজনৈতিক উপস্থিতির কোনো প্রতিফলন আমরা দেখতে চাই না। এ সময় তিনি ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে সারাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে তারা আবার সড়কে অবস্থান নেবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন তারা।

মঙ্গলবার সকাল ৭টার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের সামনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে একটি বাস চাপা দেয়। এতে প্রাণ হারান তিনি। এরপর শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

তাদের সঙ্গে যোগ দেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে বিমানবন্দর থেকে বিশ্বরোড ও বাড্ডা হয়ে রামপুরা এবং গুলিস্তান রুটের সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আবরারের বন্ধুরা বলছেন, বিইউপি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় ক্লাস ছিল আবরারের। ক্লাসে যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নর্দ্দায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আবরার জেব্রা ক্রসিংয়ে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন। এ সময় অন্য একটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি আবরারকে ধাক্কা দেয়। এরপর ওই বাসের নিচে চাপা পড়েন তিনি। ফলে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে সকালে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। তখন শিক্ষার্থীরা তার কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। তার মধ্যে রয়েছে- আবরারকে চাপা দেয়া বাসের চালককে ফাঁসি দিতে হবে, সুপ্রভাত বাসের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে, বাসস্টপেজের ব্যবস্থা করা, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা, চালকদের ছবি ও লাইসেন্স গাড়িতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করা, বসুন্ধরা গেটে ফুটওভার ব্রিজ করা, জেব্রা ক্রসিংয়ে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা ও ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করা।

এ সময় মেয়র বাসচালকের শাস্তি নিশ্চিত করা ও নিহত শিক্ষার্থীর নামে সেখানে একটি পদচারী-সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে সুপ্রভাত পরিবহনের কোনো বাস ওই রুটে চলতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।

দুপুরের দিকে নিহত আবরার আহমেদ চৌধুরীর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের বিইউপি এডিবি গ্রেড গ্রাউন্ড মাঠে। তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় জানাজা শেষে।