কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট ঘিরেই শুরু হয় বিতর্ক। সেখানে অনেক লোক কমেন্ট করেন। সম্প্রতি এই বিষয় নিয়েই মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। বিতর্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া, দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গী, সুন্দর শরীরের ধারণাকে একহাত নেন। একই সঙ্গে একে মৌখিক ধর্ষণ বলেও অভিহিত করেন এই অভিনেত্রী।
ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময়ের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে ইনস্টাগ্রামে একটি ড্রেস পরা ছবি দিয়েছিলেন স্বস্তিকা। সেখানে বহু লোকে বহু কমেন্ট করেন। সেই কমেন্টের প্রেক্ষাপটেই তার ফেসবুকে উত্তর।
সংক্ষেপে বলতে গেলে সেটি ছিল এরকম – ‘সব সময় পুরুষ, মহিলাদের ঢিলে বক্ষদেশ নিয়ে কেন কথা বলেন? বাচ্চাকে বছরের পর বছর ব্রেস্ট-ফিড করান, তারপর কথা বলুন। আমি আমার ঢিলে বক্ষদেশ নিয়ে গর্বিত। মা হয়েও গর্বিত। …আমি আন্ডারওয়্যারড ব্রা পরি না, শুধুমাত্র দুনিয়ার কাছে সেটা সুন্দর লাগবে বলে। …হ্যাঁ, আমার বক্ষদেশ ঢিলে, এবং আমি তেমনই ভালোবাসি।’
সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক হলো- সেটা সেলিব্রিটিদের জন্য এখন সরাসরি সংলাপের জায়গা। এখন তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য না মানুষকে হলে গিয়ে বসে থাকতে হয়, না একটা সাক্ষাৎকার পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
স্বস্তিকা বলেন, ‘আমার এটা বহুবার মনে হয়েছে যে এখন লোকেদের মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক এত নেগেটিভিটি আর ঘৃণা চলে এসেছে যে সেটা সারাদিন-রাত তারা ওগরাতে থাকে। তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে তারা অখুশি না কি সমাজটাই এরকম একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সেটা বোঝা দায় হয়ে গেছে। মানে আমি একজন সেলিব্রিটিকে চিনি না, কিন্তু তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলো করি গালাগাল দেব বলে। ’
তুমি যখন একজন মহিলাকে সহ্যই করতে না পার তাহলে ফলো করছ কেন?- প্রশ্ন রেখে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘শুধু অপমান করবার জন্য এবং মৌখিক ধর্ষণ করব বলে তাকে ফলো করছি। আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার এটা যারা করছে তারা শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত, বিবাহিত লোকজন, যারা সমাজের ওপর তলায় বাস করে। তাদের প্রোফাইলে গিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, সেখানে তারা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর সুন্দর ছবি দিচ্ছে। আবার মাঝরাতে এরাই গিয়ে ‘আপনার কেন বুক ঝুলে গিয়েছে’ বলে কমেন্ট করছে। ’
স্বস্তিকা বলেন, “যদি বুক না ঝোলে তাহলে ‘আপনার চোখের তলায় কেন কালি’ বলছে। এরা যে আগ্রাসন নিয়ে লেখে, মনে হয় সামনে পেলে এরাই তো মহিলাদের ধর্ষণ করবে। এটা খুব বড় একটা কনসার্ন।”
তিনি আরও বলেন, “এখন এরকম বহু সেলিব্রিটি আছেন যারা পুরো পারফেক্ট সেজে ছবি দেন। তাদের আসল চেহারাটা কেউ দেখতেই পায় না। আমি সেই পদ্ধতিতে বিশ্বাসী নই। সারাক্ষণ এদিকে আমরা ‘বি রিয়েল’, ‘বি ইউ’ বলে ঢাক পেটাচ্ছি। হলিউডে সমস্ত বড় অভিনেত্রীরা, মডেলরা যেখানে এই পিকচার-পারফেক্ট মডেলটাকে ভাঙার চেষ্টা করছে, সেখানে আমিই বা কেন আমার কৃত্রিম একটা চেহারা ব্যক্তিগত প্রোফাইলে পোস্ট করব?”
স্বস্তিকা বলেন, ‘ছবিতে কাজ করার সময় নিশ্চয়ই যে চরিত্রটা দরকার সেরকম সাজবো, কিন্তু বাড়ির ছাদে আমি করসেট পরে আমার সমস্ত সেলুলাইট ঢেকে বা পারফেক্ট প্যান্টি পরে, যাতে আমার পিছন পারফেক্ট দেখায় – কেন পোজ করব? আমি এক এক সময় ভাবি রিয়্যাক্ট করব না, কিন্তু এক একসময় না করলে এরা ভাবে যা খুশি, যতটা খুশি বলা যায়। ’
‘শুনুন, এটাতে যদি মানুষের সমস্যা হয় তাহলে রজনীকান্তের মতো অভিনেতাকে কী করে লোকে অ্যাকসেপ্ট করে নিয়েছে? তার চেহারার সঙ্গে তার অনস্ক্রিন ব্যক্তিত্বের শুধু আকাশ-পাতাল তফাৎ বললে কম বলা হয়। ওকে বাস্তব জীবনে একেবারে সাদামাটা দেখতে বলে আমি কি ওঁর ফ্যান নই? নাকি ওঁর ছবি আমি দেখব না?’, বলেন এই অভিনেত্রী।
তিনি বলেন, “আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আমার এই পোস্ট প্রায় দুহাজার শেয়ার হয়েছে। সদ্য মা হওয়া মেয়েরা আমাকে লিখেছেন, ‘আমাদের মনের কথা আপনি লিখলেন’। এখন যদি আপনি বলেন যে ব্রেস্ট-ফিডিংয়ে আপনি বিশ্বাসী নন, তাহলেও আপনাকে অ্যাটাক করা হবে। এদিকে সমস্ত বেবি-ফুডের সামগ্রীর নীচে লেখা থাকবে যে মায়ের দুধ বাচ্চার জন্য সব থেকে ভালো। দুধ খাওয়ালেও সমস্যা, না খাওয়ালেও সমস্যা। ’
‘এর পরে আমি যেটা করতে চাই সেটা হলো আমার শরীরের যে যে জায়গায় যে সমস্ত খুঁত আছে, সেগুলোকে বেআব্রু করে একটা ফটোশ্যুট করতে চাই। নিচে লেখা থাকবে, এগুলো থাকা সত্ত্বেও আমি যা অ্যাচিভ করার সেটা করেছি’, বলেন স্বস্তিকা।