দর্পণ ডেস্ক : পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক ইরান বিরোধী দু’দিনের সম্মেলন আজ থেকে শুরু হয়েছে। আমেরিকা এ সম্মেলনের মূল আয়োজক। ওয়াশিংটন জানিয়েছে এ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য ৭০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওয়ারশ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আমেরিকা দাবি করলেও এ পর্যন্ত বহু দেশ তাতে যোগ দেবে না বলে জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রথম থেকেই বলে আসছেন, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার উপায় খুঁজে বের করাই এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে তিনি এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব কমিয়ে আনার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। পম্পেও বলেন, সম্মেলনে ইরান ইস্যুটি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।

আমেরিকা মনে করছে এ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমাজকে ইরানের বিরুদ্ধে একজোট করা যাবে। আমেরিকা চায় পোল্যান্ড সম্মেলনকে পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের উপস্থিতি ঠেকানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা। তবে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাকী দেশগুলো পোল্যান্ড সম্মেলনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। এ থেকে বোঝা যায়, আমেরিকা ইরান বিরোধী আন্তর্জাতিক জোট গঠনের যে চেষ্টা করছে তা এতো সহজ হবে না। পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী দেশ রাশিয়া ওয়ারশ সম্মেলনের বিরোধিতা করে বলেছে, পরমাণু সমঝোতাকে পুরোপুরি ব্যর্থ করে দেয়াই এর প্রধান উদ্দেশ্য।

এদিকে, ইউরোপের দেশগুলোও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদমর্যাদার চাইতেও আরো নীচের স্তরের কর্মকর্তাদেরকে ওই সম্মেলনে পাঠিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় ইউরোপের কাছেও এ সম্মেলনের তেমন গুরুত্ব নেই। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস জানিয়েছেন, “তিনি পোল্যান্ডে ইরান বিরোধী সম্মেলনে যোগ দেবেন না এবং তার পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাতে যোগ দেবেন।” এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনিসহ ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশগ্রহণ না করা বা এ ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউরোপের কয়েকটি দেশ মন্ত্রী পদমর্যাদার কাউকে পোল্যান্ড সম্মেলনে না পাঠানো থেকে বোঝা যায় ইরান ইস্যুতে পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমেরিকার ইরান বিরোধী লক্ষ্য অর্জিত হবে না। ইরান বিরোধী এ সম্মেলন এতটাই সমালোচনার মুখে পড়েছে যে, কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, পশ্চিম এশিয়ায় চলমান সংকট, ক্ষেপণাস্ত্র বিস্তার রোধের উপায়, সাইবার নিরাপত্তা, জ্বালানি হুমকি ও উগ্রপন্থা মোকাবেলার বিষয়টি সম্মেলনে অগ্রাধিকার পাবে। প্রতিকুল পরিস্থিতি লক্ষ্য করে তিনি ইরানের বিষয়টিকে এড়িয়ে যান। অথচ ইরানই এ সম্মেলনের মূল টার্গেট।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, যারাই আমেরিকার উদ্যোগে ইরান বিরোধী সর্বশেষ বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তারা হয় মারা গেছেন অথবা মান ইজ্জত হারিয়েছেন অথবা ঘৃণিত বা একঘরে হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ইরান আগের মতোই শক্তিধর হিসেবে টিকে আছে।

যাইহোক, রাশিয়া, ইরাক ও লেবাননসহ আরো বহু দেশ পোল্যান্ড সম্মেলন বর্জন করায় এর সফলতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।