জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়নে নতুনদের প্রাধান্য দেবে আওয়ামী লীগ। আগে যারা এ আসনের এমপি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, এবার তাদের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা কারণে দলের মনোনয়নবঞ্চিত কয়েক পুরনো নারী এমপিকে এবার সংরক্ষিত আসনে দেখা যেতে পারে। সব মিলিয়ে সংরক্ষিত আসনে ৯০ শতাংশেরও বেশি নতুন মুখ আনার বিষয়ে মনোভাব জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দু-একটি আসন শরিক দলের জন্যও ছাড় দেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গণভবন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যেসব পরিবার ও ব্যক্তি আওয়ামী লীগের জন্য অবদান রেখেছেন, সংরক্ষিত আসনে তিনি সেসব পরিবারের নারীদের মূল্যায়ন করতে চান। পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের যেসব নারী নেত্রী আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন, বিরোধী দলের সময় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। এ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নামের তালিকা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আমাদের সময়কে বলেন, সংরক্ষিত আসনের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চান দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সবাই যেন পর্যায়ক্রমে সংরক্ষিত আসনে সুযোগ পান। সে জন্য যারা এর আগে একাধিকবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ছিলেন, তাদের অধিকাংশই বাদ পড়বেন এবার। তাদের পরিবর্তে নতুন মুখ দেখা যাবে। নতুন মুখ, তবে বয়োজ্যেষ্ঠ অনেককেই দেখা যাবে একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দশম সংসদে যেসব জেলা সংরক্ষিত এমপিবঞ্চিত হয়েছে, সেসব জেলার প্রার্থীরা এবার অগ্রাধিকার পাবেন। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই আমরা দল মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, প্রতিবারই সংরক্ষিত আসনে নতুন মুখ দেখা যায়। এবারও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ আসনে নতুনরা সুযোগ পেতে পারেন।

জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনে রাজনীতিকদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, লেখক, সংস্কৃতিকর্মী ও অভিনয় শিল্পীদেরও মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।

একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে যারা আলোচনায় রয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, সদস্য মারুফা আক্তার পপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার, অভিনয়শিল্পী অরুণা বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নীলফার আনজুম পপি, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে নির্যাতনের শিকার পূর্ণিমা রানী শীল প্রমুখ।

সংখ্যানুপাতিক হিসাব অনুযায়ী, নির্বাচনে ২৫৭ আসনে জয়ী আওয়ামী লীগ এবার ৪৪টি সংরক্ষিত আসন পাবে। আওয়ামী লীগের এ আসন থেকে ১৪-দলীয় জোট এবং দলটির নির্বাচনী মিত্ররাও ভাগ বসাতে চান। সে ক্ষেত্রে দু-একটি আসন শরিক দলের জন্যও ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে তাদের প্রাপ্য ৪টি নারী আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিয়েছে স্পিকারকে।

গতকাল মঙ্গলবার থেকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ফরম বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ফরম বিক্রি ও জমা চলবে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রথম দিনেই ৬০০-এর বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিপ্লব বড়–য়া। এদিন ফরিদুন্নাহার লাইলি, মাহজাবিন খালেদ, নীলফার আনজুম পপি, পূর্ণিমা রানী শিল, নাজমা আক্তার, অরুণা বিশ্বাস, জ্যোতিকা জোতি প্রমুখ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং পাশের ভবনের দুটি বুথে আট বিভাগের জন্য ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মনোনয়ন আগ্রহীরা ফরম সংগ্রহ করছেন।

সংরক্ষিত নারী আসনের তথ্য জানাতে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র এমপিদের কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদে সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে দলগুলো জোটগতভাবে না রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রার্থী দেবে তা জানাতে বলা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ইসিকে এ তথ্য জানাতে হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত চিঠিগুলো রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদন ও মহাসচিব বরাবর পাঠানো হয়। আর স্বতন্ত্র এমপিদের নিজ নামে চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন ২০০৪ অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট প্রকাশের পর ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ইসিকে জানাতে হবে। আর ইসি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদের তালিকা প্রস্তুত করবে।