দর্পণ ডেস্ক :  রাজনীতির মাঠে নেমেই ছক্কা হাঁকিয়ে বিশাল জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেসখ্যাত মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাকে নিয়ে এখন নতুন স্বপ্ন দেখছে নড়াইলবাসী। তাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী মাশরাফিকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি করবেন। তারা মনে করেন, তারুণ্যের প্রতীক মাশরাফি দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করবেন।

নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে মানুষ মাশরাফিকে ভালোবেসে এবং প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সঙ্গে একাত্ম হয়েই মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছেন। শুধু নড়াইলের নয়, মাশরাফি দেশের তরুণ সমাজ এবং খেলাধুলার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন।

নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি তরিকুল ইসলাম অনিক বলেন, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খেলাধুলা, কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাশরাফি বিন মুর্তজা এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এসব উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বাড়বে। মন্ত্রী হলে তো কথাই নেই।

এদিকে মন্ত্রিত্ব প্রসঙ্গে সোমবার মাশরাফি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় আমি সংসদ সদস্য হয়েছি। তিনি যে দায়িত্ব দেবেন সেটাই আমি আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব।

নড়াইল-২ (লোহাগড়া-সদরের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাশরাফি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৭১ হাজার ২১০ ভোট।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন সাত হাজার ৮৮৩ ভোট। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩২৭। নড়াইলের ইতিহাসে এত বেশি ব্যবধানের বিজয় আর কেউ পাননি। জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি খেলার মাঠের পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি। গত ২০ ডিসেম্বর লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাশরাফি একটা হীরের টুকরো। সেই হীরের টুকরোকেই আমি আপনাদের উপহার দিলাম।’

শরীর পুরোপুরি ফিট না থাকা সত্ত্বেও ২১ ডিসেম্বর নড়াইলে এসে এক সপ্তাহ ধরে নিজের নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন মাশরাফি। তিনি ও তার স্ত্রী সুমনা হক সুমি দেড় শতাধিক পথসভা ও উঠান বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, জয় করেছেন লাখো মানুষের মন। মাশরাফি যেখানেই গেছেন, সেখানেই ছিল অসংখ্য তরুণ-তরুণীর ভিড়। মানুষ যখন খবর পেয়েছে মাশরাফি এই পথ দিয়ে যাবেন, তখন থেকেই তার অপেক্ষায় থেকেছে তারা। তার নির্বাচনী বহরে অধিকাংশই ছিলেন তরুণ। তিনি কাউকে না আসতে বললেও মোটরসাইকেল নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত থেকেছেন তারা। যেখানে লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও কর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে মাশরাফির ক্ষেত্রে ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো। শুধু তাই নয়, দেশের প্রায় ২০টি জেলা থেকে তিন শতাধিক তরুণ মাশরাফিভক্ত নড়াইলে এসেছেন। নিজ খরচে তাদের প্রিয় মাশরাফির নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাড়াও তরুণ সমাজ, সাধারণ ভোটার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষ তার জন্য ভোটপ্রার্থনা করেছেন। বিষয়টি এমন হয়ে গিয়েছিল যে, ‘দল যার যার, মাশরাফি সবার’। ভোটের মাঠেও দেখা গেল তার প্রতিফলন। লাজুক, স্বল্পভাষী ও প্রচারবিমুখ মাশরাফি বিজয় লাভের পর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও খেলাধুলার উন্নয়নে কাজ করবেন।

নড়াইলে এরই মধ্যে আস্থার নাম মাশরাফি। ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে এখানে গড়ে ওঠে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন। এরই মধ্যে সেবামূলক বেশ কিছু ভালো কাজ শুরু করেছে এ সংগঠন। এসবের মধ্যে রয়েছে দুস্থ মানুষকে স্বাস্থসেবা ও শিক্ষার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কম খরচে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, শহরের দুটি পয়েন্টে ফ্রি ওয়াইফাই চালু, তৃণমূল পর্যায় থেকে ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবল খেলোয়াড় অন্বেষণ ও বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, শহরে অত্যাধুনিক একটি জিম নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু, গ্রিন ও ক্লিন নড়াইল গড়তে শহর ও লোহাগড়া পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে ১২০টি ডাস্টবিন স্থাপন, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার এক হাজার কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে ধানের বীজ বিতরণ এবং নড়াইল শহর ও লোহাগড়া পৌর এলাকার ২৫টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন। এসব সেবামূলক কাজের জন্য ক্রিকেটার মাশরাফির জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ।

এদিকে জাতীয় ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে খেলার জন্যমঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।