মির্জা ফখরুল।ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন- নির্বাচন কমিশন (ইসি), পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য একজোট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে নির্বাচন একটি তামাশা ও প্রহসনে পরিণত হয়েছে। গত ১০ বছর আমরা যে একটি স্বৈরাচার সরকারের অধীনে বসবাস করছি সেটি থেকে জনগণের মুক্তির জন্য আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু এখন নির্বাচনের আদৌ কোনও পরিবেশ আছে কি না সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
এ সময় ‘অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে কোনও মতেই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই’ বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য একজোট হয়েছে। আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় বিচার বিভাগ পক্ষপাতিত্ব আচরণ করছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করছে। সিলেট -২ আসনের প্রার্থী তাহসিনা রুশদির লুনা শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে তিন বছর আগে কেন পদত্যাগ করেননি সেজন্য মনোনয়ন বাতিল করেছে। অথচ ড. এনামুল হক সরকার জৈন্তাপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে থাকলেও তার মনোনয়ন বাতিল হয়নি। এখন হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে সেটাকে আমরা কি বলবো। আমার দলের প্রার্থী কে হবে সেটাও হাইকোর্ট বলে দিচ্ছে। তাহলে সেই হাইকোর্টকে কীভাবে বিশ্বাস করবো।’
নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন আসনে প্রার্থীদের বৈধতা দেওয়ার পর সেই প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের এখতিয়ার হাইকোর্টের আছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘২০১৪ সালে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এবার সেটা হয়নি। তাই ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে একের পর এক প্রার্থী বাতিল করছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ১৫ জন প্রার্থী কারাগারে, সাত জন বাতিল, ২৫ জনের ভাগ্য আদালতে ঝুলছে।’
নির্বাচনের মাঠে কার সঙ্গে লড়াই করছি বুঝতে পারছি না বলে প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নেতাকর্মীদেরকে বাসা থেকে গ্রেফতার, জেলগেট থেকে গ্রেফতার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রার্থীরাও পর্যন্ত বাদ যাচ্ছেন না।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘একটি দল প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে নির্বিঘ্নে আর আমাদের প্রার্থীদেরকে ঘর থেকেই বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এখনও আশাবাদী নির্বাচনের আরও ৭ দিন আছে, এখনও বিশ্বাস করি নির্বাচন কমিশন তাদের অবস্থান থেকে ফিরে আসবে। এই নির্বাচনে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোপরি সেনাবাহিনী সবাই দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ নিয়ে কাজ করবেন।
সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা সারাদেশে হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে আবার তারাই বিএনপির নামে মামলা দিচ্ছে বলে দাবি করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে আওয়ামী সন্ত্রাস, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল কাইয়্যুম, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।