দর্পণ ডেস্ক : প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে গিয়ে লাশ হলেন অনার্স পড়ুয়া ছাত্রী সুরভী আক্তার। বুধবার বিকেলে সুরভীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডোমার উপজেলার পাঙ্গামটকপুর ইউনিয়নের মৌজাপাঙ্গা লক্ষ্মীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তারের মেয়ে সুরভী আক্তার নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সুরভীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ তেলীপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আফজাল হোসেনের ছেলে আরফান হোসেনের। আরফান পঞ্চগড় সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাসের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
স্থানীয়রা জানান, প্রেমিক আরফানের কথামতো সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সুরভী বিয়ের দাবি নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে আসে। কিন্তু ছেলের পরিবার সুরভীকে মেনে না নিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দিলে সুরভী আশ্রয় নেয় প্রেমিকের চাচা পাশের বাড়ি আশরাফ হোসেনের বাসায়।
তারাও সুরভীকে ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি। ওইদিন শীত উপেক্ষা করে সারারাত মেয়েটি প্রেমিকের চাচার বাড়ির বাইরে কাটিয়ে দেয়। মঙ্গলবার প্রেমিক আরফানের বাবা বালাপাড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুঁইয়ার মাধ্যমে সালিস বৈঠক ডাকেন।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে বসে সালিস বৈঠক। সেখানে সুরভীর গ্রামের প্রভাবশালী নেতা নুরুজ্জামান বাবলুসহ প্রেমিক আরফানের গ্রামের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম ও বেশ কিছু গ্রাম্য মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন। সালিস বৈঠকে সুরভী, তার বাবা বা পরিবারের কেউ উপস্থিত না থাকলেও সমাধান টানা হয় দেড় লাখ টাকায়। পরে প্রেমিকা সুরভীর স্বাক্ষরের জন্য সালিস বৈঠকে উপস্থিতরা রাতেই যায় আশরাফের বাড়িতে। কিন্তু সুরভী প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে ছাড়া সালিস মানে না বলে জানায়।
এ সময় প্রেমিকের বাড়ির লোকজন সুরভীকে মারধর করলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর সুরভীকে একটি মাইক্রোবাসে করে ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা।
ডিমলা উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাশেদুজ্জামান বলেন, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে একটি মাইক্রোবাসে এক নারী রোগীকে আনা হয়। কিন্তু আমরা রোগীকে মৃত অবস্থায় পাই। সঙ্গে দুইজন নারী ও ৩-৪ জন পুরুষ ছিল। মৃত মেয়েটির নাম জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে পারেনি। একপর্যায় তারা লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। বিষয়টি ডিমলা থানায় জানানো হয়। সকালে মৃত মেয়েটির মুখ ও নাক দিয়ে ফেনা বের হয়।
ডিমলা থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা হয়। এরা হলো- মেয়েটির প্রেমিকের বাবা আফজাল হোসেন, মামা ফসিয়ার রহমান ও চাচা শাহাজাহান আলী। খবর দিয়ে নিয়ে আসা হয় মেয়েটির বাবা আব্দুস সাত্তারকে। মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, শুনেছি ফেসবুকে ও পরে মোবাইলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটি বিয়ের দাবি নিয়ে ছেলের বাড়ি এলে ছেলে পক্ষ আমার কাছে সালিসের জন্য আসে। মঙ্গলবার রাতে ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বসলেও কিছুক্ষণ থেকে জরুরি কাজে আমি অন্যত্র চলে যাই। কারা সালিস করেছে আমি জানি না। বুধবার সকালে জানতে পারি মেয়েটি মারা গেছে।
সুরভীর বাবা কৃষক আব্দুস সাত্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার চাই। এ ঘটনায় আমি মামলা করব।