দর্পণ ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ইন্টারনেটের গতি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তারা ইসিকে আরো বলেন, নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি হামলাও হতে পারে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও সিনিয়র নেতার ওপর জঙ্গি হামলা অথবা গুপ্তহত্যার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এরই মধ্যে এসব নেতাকে সতর্ক করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় এই পরামর্শ ও সতর্কতার কথা জানান কর্মকর্তারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। এতে সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সব রিটার্নিং অফিসার, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেন, নির্বাচনে মোবাইল ব্যাংকিং ও বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়। এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন।

পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সর্বোচ্চ সমন্বয় রয়েছে। তার জীবনে দেখা এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ সমন্বয়। নির্বাচনে টাকার লেনদেনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা তোলা হচ্ছে। এগুলো কোথায় যাচ্ছে, কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্ট সেক্টর উত্তপ্ত করে দেয়া হচ্ছে। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনে কিছু জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে পারে। ভোটের মাঠেও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হতে পারে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের এসপিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

র‌্যাবের ডিজি বলেন, ২০১৪ সালের মতো কোনো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, সাইবার ওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত করে গুজব ছড়িয়ে যাতে নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করতে না পারে, সেদিকে তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। র‌্যাব বিটিআরসির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনিও ভোটের সময়ে তিন দিনের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে নামিয়ে টুজিতে আনার প্রস্তাব করেন।

ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা নির্বাচন বানচাল করার জন্য কয়েক হাজার ক্যাডার ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করেছে। এসব সংগঠন যেন কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার ঠেকাতে তিনি নির্বাচনের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে নামিয়ে টুজি করা এবং ভোটকেন্দ্রে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সরাসরি সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দেন।

নির্বাচনে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে টুজিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন আনসারের মহাপরিচালকও। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ভোটের সময়ে মিডিয়া কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করার নীতিমালা গ্রহণ করা যায় তা ইসির ভেবে দেখা দরকার। এছাড়া বৈঠকে অংশ নেয়া প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জেলার পুলিশ সুপার গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।