দর্পণ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সরকার আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে আভাস দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক জরিপ সংস্থা দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের একটি বিশেষ সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। বিগত ৬০ বছর ধরে তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জরিপ করে আসছে।

৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে তারা জানায়, বর্তমান সরকারের সময় টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছে বাংলাদেশ। আর এ কারণেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসার সম্ভাবনা বেশি।

তারা আরও জানায়, ২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭.৭ শতাংশে। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। বলা হয়, তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাই আগামী নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। বিভিন্ন জরিপের বরাত দিয়ে তারা জানায়, এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাই সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী।

ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ সামজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। তবে এ সময়ে তাদের কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরপরও বিএনপি কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে হবে আওয়ামী লীগকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আসা জরুরি। এছাড়া নতুন মেয়াদে দলটি আবারও ক্ষমতায় এলে বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সহজ হবে।

প্রতিবেদনটিতে আভাস দেওয়া হয়, আগামী নির্বাচনে জয় পেলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা এবং ভারত, চীন ও জাপান থেকে আরও সহায়তা আনতে পারবে। তবে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। অন্তত সরকারের শুরু সময়টাতে এমনটাই ঘটবে।

ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনের মতই ওয়াশিংটনভিত্তিক রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনে এগিয়ে রাখা হয় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। এ বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ২১ মে’র মধ্যে পরিচালিত এই জরিপে বলা হয়, দেশের ৬৬ ভাগ মানুষ সমর্থন জানিয়েছে শেখ হাসিনার প্রতি এবং ৬৪ ভাগ জনগণ এখনও সমর্থন করছে আওয়ামী লীগকে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি আশানুরূপভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ৬২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দেশ সঠিক পথে আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৯ ভাগ নাগরিক। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনসাইট অ্যান্ড সার্ভের এক গবেষণা প্রতিবেদনে ৩০ আগস্ট এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের নোটে বলা হয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। আর সে কারণেই ৬৮ ভাগ নাগরিক জননিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। এর মধ্যে ৫৭ ভাগ মনে করছেন, সামনে জননিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে। সরকারি বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও জন সন্তুষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য খাতে সরকারি সেবায় সন্তুষ্ট ৬৭ ভাগ মানুষ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৪ ভাগ নাগরিক। এ ছাড়া সড়ক ও ব্রিজের উন্নয়নের প্রভাব নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬১ ভাগ নাগরিক।

এর আগে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে করা ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং রিসার্চ ডেভলোপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি)-র গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় বর্তমান সরকারের অধীনে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দেশের অধিকাংশ নাগরিক। এই জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪ ভাগ উত্তরদাতা তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে বলে মত দিয়েছেন। পূর্ববর্তী জরিপ গবেষণায় ব্যবহৃত ২৫ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের ‘টেলিফোন ব্যাংক’ থেকে এই ১০০৫ জনের সঙ্গে টেলিফোন-ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে জরিপ পরিচলানা করা হয়।

এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ১ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিগত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশ শতকরা ৬ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে।

এই গবেষণায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা? এর উত্তরে ৬৮ দশমিক ৬ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছে, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ১৩ দশমিক ৭ ভাগ মত দিয়েছেন, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে না।

এর আগে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) চালানো জনমত জরিপে প্রায় কাছাকাছি ফল পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আইআরআই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৬৪ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছিল, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) সম্মেলিতভাবে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। সেখান থেকে জানা যায়, যুব সমাজের ৭৫ ভাগ মনে করে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশ আরও সমৃদ্ধশালী হবে। তাদের ৬০ ভাগ মনে করে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট-আরডিসি পরিচালিত গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের সবচাইতে বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭২ দশমিক ৩ ভাগ উত্তরদাতা শেখ হাসিনা সম্পর্কে ভাল মত প্রদান করেছেন, পক্ষান্তরে বিএনপি’র দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ভাল মত প্রদান করেছেন মাত্র ২৬ দশমিক ৬ ভাগ উত্তরদাতা। এদিকে, ২০১৫ সালে প্রকাশিত আইআরআই এর পৃথক এক জরিপ অনুসারে ৬৭ ভাগ মানুষ আস্থা রাখেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

এদিকে যুব সমাজের মধ্যে বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখনও অনেক বেশি। বিশেষত ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ৫৫ দশমিক ৪ ভাগ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগের পক্ষে ‘ভাল’ মত প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে ‘ভাল’ মত প্রদান করেছেন মাত্র ২০ দশমিক ৮ ভাগ। এই বয়সীদের মাত্র ২ দশমিক ৫ ভাগ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ‘খারাপ’ মত প্রকাশ করেছেন, পক্ষান্তরে বিএনপির ক্ষেত্রে ‘খারাপ’ মত প্রকাশ করেছেন ১৩.৮ ভাগ উত্তরদাতা। এই জরিপ অনুসারে, কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে ৩৫ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দেবে বলে জানায়, অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে সমর্থন জানায় মাত্র ৩ দশমিক ৪ ভাগ যুবক।

শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ করে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে সূচকে ভারতসহ অন্যান্য দেশের অবদান যেখানে ৩০-এর কোটায়, সেখানে বাংলাদেশের অবদান ৫০-এর ওপরে। ‘জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে স্বপ্রণোদিত অঙ্গীকার ও প্রতিপালন’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

জলবায়ুর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে দুর্নীতি মুকাবিলায় দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। জার্মানির বার্লিন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনালের জরিপে ২০১৭ সালে দুর্নীতি হ্রাসে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৩ তম। বাংলাদেশ ১০০ এর মধ্যে এ বছর স্কোর করেছে ২৮। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫ তম, স্কোর ছিল ২৬। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সালে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

অন্যদিকে, লিঙ্গ সমতা সূচকে এশিয়ায় বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব লিঙ্গ সমতা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এশিয়ার শীর্ষ ১০ দেশে বাংলাদেশ ছাড়া ঠাঁই পেয়েছে মিয়ানমার। ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক আর্টিকেলে এই তথ্য জানানো হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে ২৫ ধাপ উন্নতি করে ৭২তম অবস্থান থেকে ৪৭তম অবস্থানে চলে এসে বিশ্বকে অবাক করে দেয় বাংলাদেশ। লিঙ্গ সমতা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৭১৯ (০.৭১৯)। যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ১০৬ স্কোর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মালদ্বীপ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে দ্রুততম সময়ে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ তার লিঙ্গ বৈষম্যে ৭২ ভাগ নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং আয়ের সম সুযোগ লাভ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব প্রদানে দারুণভাবে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে সামগ্রীকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর সে কারণেই জরিপগুলোতে এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।