কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের আ’লীগ ও বিএনপি নির্বাচনের প্রচারে অনিয়মসহ গতকাল (১১ ডিসেম্বর) রাঙ্গাবালীতে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ জানান।
বুধবার সকাল ১১টায় কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে বিএনপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে রাঙ্গাবালী উপজেলার খালগোড়া বাজারে পথসভা করার আগেই যুবলীগ নেতা রিয়াজ মৃধা, রেসাদ ও চেয়ারম্যান মামুন খানের নেতৃত্বে হামলা করে দলীয় অন্তত: ১৫০ নেতাকর্মীকে আহত ও জখম করে। এসময় চর মোন্তাজ ইউনিয়নের বশির ফকিরের পা কেটে দেয়া হয়। এছাড়া কাওসার আহম্মেদ, সাহজুল মীর, আলাউদ্দিন প্যাদা, সাইদুল গাজী, মন্নান মীর, খোকন, মোকলেছ মীর, রেশাদ, রিয়াদ আকন, রাব্বি, জাকির মোমিন হাওলাদার, মোকলেছুর হাওলাদার, মোশারফ লাহেরী, বেলাল খলিফা ও রহিম খলিফা রক্তাক্ত জখম হয। এরা বরিশাল, কলাপাড়া ও গলাচিপা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও অভিযোগ করেন, ধুলাসারের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইউনুচ দালাল, শাকিল, এমদাদ মৃধা, হাবিবের নেতৃত্বে মঙ্গলবার চাপলী বাজারের বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয়ের চেয়ার টেবিল লুট করে নেয়া হয়। ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে প্রচার মাইক ভাংচুর করা হয়। একইদিন কুয়াকাটায় আওয়ামীলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মজিবর, মিলন পাহলান, খালেক খান ও মহিবুল্লাহ চৌকিদারের নেতৃত্বে প্রচার মাইক ভাংচুর করা হয়। মহিপুর বাজারে নির্বাচনী প্রচারে বাঁধা দেয়া হয়। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার। এছাড়া আ’লীগ প্রার্থী মহিব্বুর রহমান মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কলাপাড়া হেলিপ্যাড মাঠে দোয়া মোনাজাতের নামে ২০টি মাইক ব্যবহার করে নির্বাচনী সভা করে এবং উক্ত সভায় অংশগ্রহরকারীদের মাঝে ১৫০০০ খিচূড়ির প্যাকেট বিতরন করে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে, যা আচরন বিধি ১০ উপধারার ’চ’ এর স্পষ্ট লংঘন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক হাজী হুমায়ুন সিকদার, পৌর বিএনপি’র সভাপতি উপাধ্যক্ষ নুরবাহাদুর তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান সহ দলীয় নেতা-কর্মীরা।
এদিকে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে বেলা ১২টায় অপর এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাকিবুল আহসান লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, রাঙ্গাবালীতে আ’লীগের নির্ধারিত পথসভা চলছিল। তার পাশে ধানের শীষ প্রতীকের পথসভার আয়োজন করে বিএনপি। এসময় বিএনপি প্রার্থী এবিএম মোশাররফ হোসেন পথসভায় উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে জামায়াত ও বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসী কবির তালুকদার, রহমান মাষ্টার, সাবু মিয়া, সোহাগ আকন, জাকির, নিয়াজ, বিপু, ইব্রাহীম, রহমান ফরাজী, মোতালেব হাওলাদার, মামুন হাওলাদার ও রাকিব হাওলাদারের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালায় আ’লীগ কর্মী সমর্থকদের ওপর। হামলায় রাঙ্গাবালী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক লিটু, হাবিবুল বসার তোতা, শাহারুল হাওলাদার, কালাম হাওলাদার, রাহাত, ইউপি সদস্য শিমুল , সাদ্দাম, সোহেল মীর, মহাসীন, বিপ্লব, আতিকুর, কামাল, সোহেল মিয়াসহ অর্ধশত আহত হয়। এরা বর্তমানে কলাপাড়া, গলাচিপা ও বরিশালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধুলাসার, মহীপুর ও কুয়াকাটায় যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে এবং যাদের নাম বলা হয়েছে তারা আ’লীগের কেউ নয়। এ হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের সাথে আ’লীগের কেউ জড়িত নয় বলে দাবী তার। আ’লীগের সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার, পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দীন, অ্যাডভোকেট বিমল সমাদ্দার প্রমূখ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল ৩ টায় উপজেলার খালগোড়া বাজারের রাঙ্গাবালী জাহাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে এক সভার আয়োজন করা হয়। একইসময় ওই বাজারের বালুর মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মহিব্বুর রহমান মহিবের সমর্থকরাও সভার আয়োজন করেন। তবে মহিব্বুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।একপর্যায় দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গাবালী থানায় একটি মামলা করা হয়, যার মামলা নং-৫। এ মামলায় বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল ইসলাম লিটু বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কবির হোসেন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান ফরাজীসহ দলের ৪৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা হিসেবে দলের ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়।
রাঙ্গাবালী থানায় ওসি মিলন কৃষ্ণ মিত্র জানান, আ’লীগের পক্ষ থেকে রাঙ্গাবালী থানায় বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক আইনে ৪৫ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে ২০জনকে আটক করেছে। তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের করার তথ্য জানা যায়নি।