দর্পণ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সবাইকে অনানুষ্ঠানিক বিদায় জানিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বর্তমান সরকারের শেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিদায় জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় নতুন মানুষ আসবে। যারা রাজনীতি করেন, তাদের বিষয়টি মেনে নিতে হবে। কে আসবে জানি না।’ দুপুরের খাবারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী জানান, অনানুষ্ঠানিক বিদায়ী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সব মন্ত্রীকে তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান। পরে সব সচিবকে ডেকে তাদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। এ বৈঠকে সন্তুষ্টির একটা আবহ ছিল প্রধানমন্ত্রীর চোখে-মুখে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বিদায়ী বক্তৃতায় বলেন, ‘আজ (গতকাল) আমাদের শেষ বৈঠক হয়েছে। এরপর নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভার আর কোনো বৈঠক হবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা নতুন ক্যাবিনেট করবেন। নতুন ক্যাবিনেটে কে আসবেন, আপনি আসবেন, না আমি আসব, তা কেউ জানি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই কিন্তু শেষ সভা। নির্বাচন উপলক্ষে এরপর আপনারা সবাই যার যার এলাকায় চলে যাবেন। যার যার কাজ করবেন। ফলে দেখা হবে না। আর পরবর্তী সংসদে জনগণ কাকে নিয়ে আসবে, তা তো এখন আমি জানি না। তবে বর্তমান মন্ত্রিসভার সবার সহযোগিতা আমি পেয়েছি। আপনাদের এই সহযোগিতার জন্যই জনকল্যাণে, তাদের স্বার্থে অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি।’
ওই প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ পর্যালোচনায় মন্ত্রিসভা কমিটি : সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম মজুরি বোর্ড যে সুপারিশ করেছে, তা পর্যালোচনায় পাঁচ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দিয়েছে সরকার। সংস্কৃতিমন্ত্রীকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটিতে শিল্পমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড, ২০১৮’-এর সুপারিশ উত্থাপন করা হলে মন্ত্রিসভা এই কমিটি গঠন করে দেয় বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নবম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সেজন্য মন্ত্রিসভা কমিটিকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। ‘এই কমিটি (মন্ত্রিসভা কমিটি) যেটা চূড়ান্ত করবে সেটাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। যে সুপারিশ এসেছে উনারা তা পর্যালোচনা করবেন।’
পাঁচটি শ্রেণিতে ১৫টি বেতনক্রম নির্ধারণে সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, প্রথম তিন গ্রেডে ৮০ শতাংশ এবং শেষের তিন গ্রেডে ৮৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ওয়েজ বোর্ড কমিটির সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের মূল বেতন ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে অষ্টম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার, যা ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গত ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়। মো. নিজামুল হক গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর হাতে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
ট্রেড ইউনিয়নের বিধান রেখে ইপিজেড শ্রম আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন : ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পরে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শফিউল আলম বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিকদের এই সংগঠনের নাম হবে শ্রমিককল্যাণ সমিতি। এই সমিতির গঠনতন্ত্র শ্রমিকরা নিজেরাই বানাবেন। ১৩ বছর ধরে আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আজ (গতকাল) এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হলো। শ্রম আইন ২০০৬, আইএলও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার সঙ্গে পরামর্শের পর সমন্বয় করে আইনটি করা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দেয়া তথ্য মতে, এ আইনে যে বিধান রয়েছে তা হলো-১. এ আইনের মূল বিষয় হলো, শ্রমিকদের ২০ শতাংশ সম্মতি দিলেই শ্রমিক সংঘ করা যাবে। ২. বেপজার পাশাপাশি শ্রম পরিদপ্তরের পরিদর্শকরাও এ কারখানা পরিদর্শন করতে পারবেন। আগে শুধু বেপজার পরামর্শকরাই ইপিজেডের কারখানা পরিদর্শন করতে পারতেন। ৩. ইপিজেডের অভ্যন্তরে স্থাপিত শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের কোনো দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ধর্মঘট বা আন্দোলন-সংগ্রাম করার প্রয়োজন হলে দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সম্মতি থাকলেই চলবে। এর আগে আরো বেশি শ্রমিকের সম্মতি লাগত। ৪. কারখানায় চাকরি করা অবস্থায় কোনো শ্রমিকের ৬০ বছর পূর্ণ হলে তার চাকরি জীবনের প্রতি বছরের জন্য ৪৫ দিনের বেতনের হিসাবে টাকা পাবেন। আগে শ্রমিকরা এখানে ৩০ দিনের বেতনের সমান টাকা পেতেন।
বীমা করপোরেশনের মূলধন বাড়ছে : জীবন বীমা ও সাধারণ বীমাকে করপোরেশনের অনুমোদিত এবং পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বীমা করপোরেশন আইন, ২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৩৮ সালের দি ইনস্যুরেন্স অ্যাক্ট রহিত করে ২০১০ সালে দি ইনস্যুরেন্স করপোরেশন আইন করা হয়। ওই আইনকে রহিত করে নতুন আইন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনের অধীনে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমাকে আনা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, এতদিন জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনের অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ২০ কোটি টাকা করে। প্রস্তাবিত আইনে জীবন বীমা করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সাধারণ বীমা করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বীমা করপোরেশন আইনে পরিচালনা পর্ষদ সাতজন থেকে বাড়িয়ে ১০ জনে উন্নীতের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমপক্ষে পাঁচজনের উপস্থিতিতে কোরাম হবে বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।