দর্পণ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটে শরিক হতে আগ্রহী জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানা গেছে। জাপাকে অর্ধশত আসন ছেড়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গেও আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে ছেড়ে দেয়া আসনগুলোতে রিটার্নিং অফিসারদের চিঠি দিয়ে জোটের শরিকদের আসন নির্দিষ্ট করে দেবে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের শরিকদের আসন বণ্টন এরই মধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নেতারা এসব তথ্য জানান।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও জাতীয় পার্টির চার আসনে নৌকা প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছেন। শেষ মুহূর্তে দলের মনোনয়নপ্রাপ্তির আশায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তারা। যদিও দলীয় সূত্রের দাবি, সম্ভাব্য মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপিদের আসনে নতুন করে আর কাউকে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং জাপার বর্তমান এমপিদের কিছু আসনে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার গণভবনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ওই আলোচনায় জাপাকে ৫০টির কাছাকাছি আসনে ছাড় দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জাপার সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গতকাল জানান, ‘আমাদের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি খুব শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।’
গতকাল জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, ‘আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই সিদ্ধান্ত হবে।’ তিনি আশা করেন ৫০টি আসন তাদের জন্য ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৯ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সম্ভাব্য মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়ায় আশায় নীলফামারী-৪ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম-৯ ও কক্সবাজার-৩ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেননি।
জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপিদের চারটি আসনে আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেয়া না হলেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দলের নেতারা। নীলফামারী-৪ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের আখতার হোসেন বাদল, ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্দার আলী, আমেনা কোহিনুর ও আমিনুল ইসলাম সরকার। এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির শওকত চৌধুরী। রংপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ। এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
বগুড়া-৭ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ডা. মোস্তফা আলম নান্নু। এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মুহম্মাদ আলতাফ আলী। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও সোনারগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন।
ময়মনসিংহ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে কেএম খালিদ বাবুকে। ওই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি। ময়মনসিংহ-৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রুহুল আমিন মাদানী। ওই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির এমএ হান্নান মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন কারাগারে।
কুড়িগ্রাম-১ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির একেএম মোস্তাফিজুর রহমান। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আছলাম হোসেন সওদাগর। কুড়িগ্রাম-৩ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির ডা. আক্কাস আলী। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এমএ মতিন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাকির হোসেন। ওই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির (জেপি) রুহুল আমিন।
সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন হাফিজ আহমেদ মজুমদার। ওই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন। হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শাহনেওয়াজ গাজী। ওই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মুহাম্মদ আবদুল মুনিম চৌধুরী। কুমিল্লা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সেলিনা আহমেদ মেরী। সেখানকার বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির আমির হোসেন। চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ওই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট তিনটি আসন (মুন্সীগঞ্জ-১, লক্ষ্মীপুর-৪ ও ঢাকা-১৭) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের হাসনাত আমিনী একটি আসন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) চাইছেন। তবে তাদের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি পাঁচটি, জাসদ তিনটি, বাংলাদেশ জাসদ দুটি, তরীকত ফেডারেশন দুটি এবং জাতীয় পার্টি-জেপিকে একটি আসনে ছাড় দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
জাপা সূত্রে জানা যায়, দলের নেতারা বর্তমান এমপিদের ওই আসনগুলো ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন। দু-একটি বাদে বাকি আসনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে।