দর্পণ ডেস্ক : বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে ৩০০ আসনে ৩ হাজার ৫৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এর বাইরে অনলাইনেও জমা পড়েছে ৩৯টি মনোনয়ন। আগামী ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ভোটযুদ্ধ। এক দশক পর দেশের শীর্ষ দুই জনপ্রিয় প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষের সরাসরি লড়াই মাঠে গড়াতে যাচ্ছে।
এবার অনলাইনেও মনোনয়ন জমা দেয়ার সুযোগ রাখা হয় সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি। তবুও বুধবার সারাদেশের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়গুলো ছিল উৎসবমুখর। প্রায় এক দশক পর এ নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণের ফলে সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ দেখা গেছে। এদিন রাতে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, তাদের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগে ৩৬১টি, রাজশাহী বিভাগে ৩৫৩টি, খুলনা বিভাগে ৩৫১টি, বরিশাল বিভাগে ১৮২টি, ময়মনসিংহে ২৩৪টি, ঢাকা বিভাগে ৭০৮টি, সিলেট বিভাগে ১৭৭টি ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৮৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছে।
এর মধ্যে সর্বাধিক ঢাকা-১৭ আসনে ২৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সর্বনিম্ন চারটি মনোনয়ন জমা পড়েছে মাগুরা-২ আসনে। তিনি জানান, অনলাইনে ৩৯টি মনোনয়ন জমা পড়লেও ২৩টি ছাড়া বাকিগুলো অসম্পূর্ণ। দলভিত্তিক তালিকা ইসির পক্ষ থেকে আজ জানানো হবে বলে ইসি সচিব উল্লেখ করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের কারণে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ ভোটের লড়াইয়ে ছিল না। এবারই প্রথম দেশজুড়ে সরাসরি লড়াইয়ে নামছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী একই দল থেকে একাধিক ব্যক্তিকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হলেও বাছাইয়ের পরে যার পক্ষে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেয়া হবে, তিনি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবেন। অন্যদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হবে।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেশিরভাগ আসনে একজন প্রার্থী দেয়ায় বেশ কয়েকটি স্থানে মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপি বেশিরভাগ আসনে একাধিক প্রার্থী দিলেও কয়েকটি স্থানে তাদের মনোনয়নবঞ্চিতরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ওপর জোর দেয়ার কারণে বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। তবে কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। অনেক স্থানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকা বিভাগ : ঢাকা বিভাগের অর্ধশত আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মী, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কেউ কেউ নিজে উপস্থিত না থেকে দলীয় অনুসারী ও স্বজনদের মাধ্যমে জমা দেন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিভাগের ৫০টি আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে অন্তত ৫০০ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকার ২০টি আসনে ৩০০ জন তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
গোপালগঞ্জের তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের তিনজন, বিএনপির ছয়জন, ইসলামী আন্দোলনের তিনজন ও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের ছয়জন ও বিএনপির ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ফরিদপুরের চারটি আসনে ৪০ জন, গাজীপুরের পাঁচটি আসনে ৫১, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে ৫৮, রাজবাড়ীর দুটি আসনে ১৮, টাঙ্গাইলের আটটি আসনে ৬৪, মুন্সীগঞ্জের তিনটি আসনে ২০, মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে ২৫ ও নরসিংদীর পাঁচটি আসনে ৩৬ জন তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগ : চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনে ৫৫২ জন প্রার্থী উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্রের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, গণফোরাম, জাসদ, বাসদ, এনপিপি, ইসলামী ফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা। গতকাল শেষ দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে প্রায় ১৮০ জন, কুমিল্লার ১১টি আসনে ৭৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনে ৭৫, নোয়াখালীর ছয়টি আসনে ৪৫, চাঁদপুরে পাঁচটি আসনে ৫৫, লক্ষ্মীপুরে চারটি আসনে ২৯, কক্সবাজারের চারটি আসনে ২৮, ফেনীর তিনটি আসনে ৩৪, রাঙ্গামাটির একটি আসনে ১২, খাগড়াছড়ির একটি আসনে ১১ ও বান্দরবানের একটি আসনে সাত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রার্থীদের মধ্যে দুই শতাধিক প্রার্থী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। জামায়াতের অর্ধশতাধিক প্রার্থী নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।
রাজশাহী বিভাগ : রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ৩৯টি আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ৩২৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সবচেয়ে বেশি ৭৩টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বগুড়ার ৭টি আসনে। বিভাগের অন্য জেলার মধ্যে রাজশাহীতে ৫৩, নওগাঁয় ৪৪, পাবনায় ৪২, সিরাজগঞ্জ ও নাটোরে ৩৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪ এবং জয়পুরহাটে ১৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
বগুড়া ও নওগাঁর কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রায় সব আসনেই বিএনপির দুই থেকে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
বগুড়ার ৭টি আসনে ৩১, জয়পুরহাটের দুটি আসনে ৯, নাটোরের ৩টি আসনে ২০, নওগাঁর ৬টি আসনে ২৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩টি আসনে ১১, সিরাজগঞ্জের ৬টি আসনে ২৪, পাবনার ৫টি আসনে ২৩ ও রাজশাহীর ৬টি আসনে ২৬ জন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৬, বিএনপির ১১১ ও জাতীয় পার্টির ২৪ জন তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
খুলনা বিভাগ : খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৩৬টি আসনে মোট ৩৩৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। খুলনার ছয়টি আসনে ৫১ জন, বাগেরহাটের চারটি আসনে ২৯, সাতক্ষীরার চারটি আসনে ৩৮, মাগুরার দুটি আসনে ১৪, নড়াইলে দুটি আসনে ২৪, চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে ১৯, কুষ্টিয়ার চারটিতে ৩৪, মেহেরপুরের দুটি আসনে ৩০, ঝিনাইদহের চারটি আসনে ৩৭ ও যশোরের ছয়টি আসনে ৫৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪২ ও বিএনপির ৬৪ জন রয়েছেন। বাকিরা স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের।
সিলেট বিভাগ : বিভাগের চার জেলার ১৯টি আসনে সব মিলে ১৬৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সিলেট জেলার ছয়টি আসনে ৫৯ জন, সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে ৪৮, মৌলভীবাজারের চারটি আসনে ২৭ ও হবিগঞ্জের চারটি আসনে ৩১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এসব মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৫ প্রার্থী সমসংখ্যক আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অন্যদিকে সবকয়টি আসন মিলে পুরো বিভাগে বিএনপির মোট ৩৭ জন দলীয় প্রার্থী পরিচয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। জাতীয় পার্টির ১০ জন ১২টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন। পুরো বিভাগে ২০ প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
জামায়াত নেতাদের মধ্যে সিলেট-৫ আসনে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনে হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার-১ আসনে আমিনুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এসব আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া বাসদের (মার্কসবাদী) একজন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনএনপি) চারজন, ইসলামী আন্দোলনের ১৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোটে ছয়জন, খেলাফত আন্দোলনে একজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ছয়জন, খেলাফত মজলিসের সাতজন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) তিনজন, ঐক্যজোটের একজন, বিকল্পধারার তিনজন, জাসদের দুজন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চারজন, সিপিবির দুজন, গণতন্ত্রী পার্টির একজন, এলডিপির একজন, জেএসডির একজন, ন্যাপের একজন, গণফোরামের পাঁচজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির একজন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দুজন, ইসলামিক ফ্রন্টের দুজন, বাসদের একজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
রংপুর বিভাগ : রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩৪১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছেন ৩০ জন ও বিএনপির ৬৯ জন। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে ২৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
পঞ্চগড়ের দুটি আসনে ১৭ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনে ২৫, দিনাজপুরের ছয়টি আসনে ৫৯, নীলফামারীর চারটি আসনে ৪৩, লালমনিরহাটের তিনটি আসনে ১৮, রংপুরের ছয়টি আসনে ৬৫, কুড়িগ্রামের চারটি আসনে ৫৭ ও গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে ৫৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বরিশাল বিভাগ : বিভাগের ২১ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ১৭২ জন।
এর মধ্যে বরিশাল জেলার ছয় আসনে ৫১ জন, ভোলার চার আসনে ২৪, ঝালকাঠির দুটি আসনে ২১, পিরোজপুরের তিনটি আসনে ৩০, বরগুনার দুটি আসনে ১৯ ও পটুয়াখালী চারটি আসনে ২৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র দাখিল করা ১৭২ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৮ ও বিএনপির ৪২ জন। বাকিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।