দর্পণ ডেস্ক : সাপ গবেষক ড. কার্ল প্যাটারসন স্মিথ—যিনি ‘কোরাল স্নেক’ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, সেই তিনি সর্প দংশনে মৃত্যু্বরণ করেন। তার সেই মৃত্যুবরণ ছিল অনেকটা ইচ্ছে করেই। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন যে, সাপের বিষ অনেক সময় মারাত্মক নাও হতে পারে। তার সেই উপলব্ধির বিষয়টি তিনি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধও করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শিকাগো ডেইলি ট্রিবিউন নামক এক সংবাদ পত্রে এই খবরটি চাপা হয়।

শিকাগোর লিঙ্কন পার্ক চিড়িয়াখানার পরিচালক শহরের ফিল্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে ১৯৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গবেষণার জন্য একটি সাপ পাঠিয়েছিলেন। সাপটির মাথা উজ্জ্বল রঙের নকশায় ঢাকা ছিল এবং এর মাথার আকৃতি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার গেছো সাপের মতো, যেগুলো বুমস্ল্যাং নামেও পরিচিত। সাপের আক্রমণের পর স্মিথ কোনো ধরনের চিকিৎসা সহায়তা না নিয়ে তার বদলে আঙুল থেকে রক্ত চুষে নিতে শুরু করলেন। তারপর নিজের ওপর বিষের প্রভাব কী হচ্ছে তা লেখার জন্য তিনি নোটখাতার (ডায়েরি) দিকে এগিয়ে যান।

মার্কিন রেডিও পিআরআইয়ের সায়েন্স ফ্রাইডে নামে একটি অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ‘ডায়েরি অব এ স্নেকবাইট ডেথ’, অর্থাৎ সাপের দংশনে মৃত্যুর ডায়েরি। যেখানে ডক্টর কার্ল পি স্মিথের জীবনের শেষ কয়েক ঘণ্টার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে তার নিজেরই বর্ণনায়।

মৃত্যুর আগে ড. কার্ল প্যাটারসন স্মিথের ডায়েরিতে লেখা সে অনুভূতির খণ্ডাংশ নিচে তুলে ধরা হলো।

বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা: প্রচণ্ড গা গুলাচ্ছে কিন্তু বমি হয়নি। শহরতলির একটি ট্রেনে চেপে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম।

বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা: প্রচন্ড ঠান্ডা এবং কাঁপুনি দিয়ে ১০১.৭ ডিগ্রি জ্বর। মুখ দিয়ে কফের সাথে রক্ত বেরোতে শুরু করেছে ৫:৩০ মিনিটের দিক থেকে, বেশির ভাগই মাড়ি থেকে।

রাত সাড়ে ৮টা: দুই টুকরো মিল্ক টোস্ট খেলাম।

রাত ৯টা থেকে ১২:২০ মিনিট: ভালোই ঘুমালাম। ১২:২০ মিনিটের দিকে প্রস্রাব করলাম, মূলত রক্তই গেল, তবে পরিমাণ অল্প। ৪:৩০ মিনিটের দিকে এক গ্লাস পানি পান করলাম, প্রচন্ড গা গুলানো এবং বমি বমি ভাব, হজম না হওয়া খাবার পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে এলো। এরপর কিছুটা ভালো লাগছিল এবং ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘুমালাম।

২৬ সেপ্টেম্বর, ভোর ৬:৩০ মিনিট: তাপমাত্রা ৯৮.২. সিরিয়াল এবং টোস্টের সাথে ডিম পোচ, আপেল সস এবং কফি দিয়ে সকালের নাশতা খেলাম। প্রতি তিন ঘণ্টায় প্রস্রাব নয়, এক আউন্স করে রক্ত বের হচ্ছে । মুখ এবং নাক দিয়ে রক্ত ঝরেই যাচ্ছে, তবে খুব বেশি নয়।

সায়েন্স ফ্রাইডে প্রতিবেদনে এটিই ছিল স্মিথের লেখা সর্বশেষ কথা।

দুপুর দেড়টার দিকে মধ্যাহ্নভোজের পর স্মিথ বমি করেন এবং স্ত্রীকে ডাকেন। যখন তাকে সহায়তা দেওয়া শুরু হয় ততক্ষণে তিনি অচেতন হয়ে হয়ে গেছেন এবং তার শরীর প্রচণ্ড ঘামে ভিজে গেছে।

ডাক্তার ডাকার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেল ৩টার মধ্যে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়; মৃত্যুর কারণ দেখানো হয় ‘রেসপিরেশন প্যারালাইসিস’। স্মিথের মৃত্যুর রিপোর্টে বলা হয়, ফুসফুসে রক্তক্ষরণের কারণে স্মিথের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছিল। চোখ, ফুসফুস, কিডনি হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়।